শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় স্বাভাবিকতা হারিয়েছে পারিবারিক কাঠামো, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, মে ১৫, ২০২১

করোনায় স্বাভাবিকতা হারিয়েছে পারিবারিক কাঠামো, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

বৈশ্বিক মহামারিকালে দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। এই মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক স্থবিরতা অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে মানুষের জীবন-জীবিকাসংক্রান্ত প্রায় সকল ক্ষেত্র। করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জটিল রোগসহ অনেক অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পাশাপাশি জন্মের ঘটনাও ঘটছে। ফলে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো অনেকাংশেই স্বাভাবিকতা হারিয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশেও পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই দ্বিতীয়বারের মতো এসেছে দিবসটি। তাই করোনাকালে পরিবারগুলোর প্রয়োজন ও সামর্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস এবারের প্রতিপাদ্য 'পরিবার এবং নতুন প্রযুক্তি' নির্ধারিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা পরিস্থিতি আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নানা সংকট সৃষ্টি করেছে। তাই গত এক বছরের অভিজ্ঞতা ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে এসব বিষয়ে সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেই এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এতে আমাদের হাজার বছরের নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা পারিবারিক কাঠামো রক্ষা পাবে। এবিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ জরুরি। এবারের পরিবার দিবসের মূল বক্তব্যকে অত্যন্ত সময়োপযোগী উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিবার হচ্ছে আমাদের সমাজ কাঠামোর মূল ভিত্তি। সেই পরিবার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই ভিন্নভাবে ভাবার সময় এসেছে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও গতানুগতিকতার বাইরে যেতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে প্রত্যেক মানুষের কাছে যথাযথ সেবা পৌছাতে সরকারি বেরসকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। পারিবারিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিহেভিয়ার চেঞ্জ কমিউনিকেশন বিষয়ে কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্তবিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৪ জন অতিরিক্ত শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে প্রায় ৯ হাজার ২৩৬ জন। সেখানে করোনাকালে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে এবছরে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার অতিরিক্ত শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও দেখা যায়, পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। এর পেছনে প্রধান কারণগুলো হচ্ছে করোনাকালে লকডাউন, দোকানপাট বন্ধ থাকা, সেবাকর্মী বা গ্রহীতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিতে কিংবা সেবাকেন্দ্রে এসে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়া, করোনাকালে আর্থিক সংকট ইত্যাদি। যা চলমান পরিবারে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের ৫৯তম অধিবেশনেও বৈশ্বিক মহামারিকালে পরিবার দিবসকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান এএফপি-মিডিয়া অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রামের টিম লিডার পুলক রাহা। তিনি বলেন, ওই অধিবেশন থেকে সামাজিকভাবে টেকসই উন্নয়নের জন্য সামাজিক বিকাশ এবং সকলের কল্যাণে প্রযুক্তির ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে এবারের পরিবার দিবস পালনের মূল বক্তব্য নির্ধারণ করা হয়। তিনি আরো করোনাকালে নিরাপদ প্রসব, প্রয়োজনীয় পরিবার-পরিকল্পনা সেবা সামগ্রী প্রাপ্তি, এএনসি বা পিএনসি সেবা যথা সময়ে পাওয়াই হচ্ছে পরিবারগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এবিষয়ে মেরি স্টোপস বাংলাদেশ-এর অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মনজুন নাহার বলেন, বৈশ্বিক মহামারিকালে দ্বিতীয়বারের মতো পরিবার দিবস পালন করছি। এসময়ে পরিবারগুলোকে নানান সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশের যেকোনো দুর্যোগে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা অবহেলিত থাকে। মনজুন নাহার আরো বলেন, কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবার মতো জরুরি বিষয়ও গুরুত্বহীন থাকে। অথচ একটি পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য এই বিষয়গুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবেই বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়া দরকার। তাই করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে প্রয়োজনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
Link copied!