শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত স্বপ্নের টানেল

প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, নভেম্বর ২৬, ২০২২

কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত স্বপ্নের টানেল

ডেইলি খবর ডেস্ক: খুলছে স্বপ্নের টানেল। কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত বাংলাদেশের একমাত্র টানেল। নদীর তলদেশ থেকে ১৮-৩৬ মিটার গভীরে তৈরি করা হয়েছে দুটি সুড়ঙ্গ। ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেই সুড়ঙ্গ ধরে হয়েছে দুটি টিউব। এই দুটি টিউবের বুক চিরে তৈরি করা হয়েছে চার লেনের সড়ক। নতুন বছরের শুরুতে এই সড়ক ধরে নদীর নিচ দিয়ে চলবে গাড়ি।এর আগে সমাপ্তি টানা হচ্ছে অবকাঠামো তৈরির মূল পূর্ত কাজের। টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এই টিউবের মাধ্যমে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী যানবাহন আসবে। উত্তর টিউবের পূর্ত কাজও শেষের পথে। উত্তর টিউবের মাধ্যমে শহর থেকে আনোয়ারামুখী যানবাহন চলাচল করবে। এই টিউবের কাজও শেষ হয়ে গেছে ৯৯ শতাংশ। অবশিষ্ট কাজ দ্রæত শেষ করে নতুন বছরের শুরুতেই খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের এই টানেল। পুরো প্রকল্পের কাজ ৯৪ শতাংশ সম্পন্ন হলেও পূর্ত কাজ শেষ। সফলতার এই ক্ষণটাকেও তাই স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার টানেলের 'দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সমাপ্তির উদযাপন' অনুষ্ঠান করবেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। দেশের এই প্রথম টানেলের নামকরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে।টানেলের অগ্রগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন,কর্ণফুলী নদীর বুকে টানেল তৈরির এই কাজটি ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। তার পরও অবকাঠামো তৈরির মূল পূর্ত কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি আমরা।'সুড়ঙ্গ খনন, রাস্তা নির্মাণ, সংযোগপথ তৈরির পুরকৌশলের কাজ শেষ হয়ে গেছে। শেষ হয়েছে টানেলের ভেতরে বিকল্প পথ তৈরির কাজও। এখন কানেকটিং পথ তৈরির কাজ চলছে জোরেশোরে। বাতি স্থাপন, পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও চলছে সমান তালে। টানেলে পুরকৌশল,বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক-তিন ধরনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ তিন পর্যায়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই পরীক্ষামূলক যান চলাচল শুরু করার ঘোষণা দেবে কর্তৃপক্ষ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সমীক্ষা অনুযায়ী টানেল দিয়ে বছরে প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। চালুর তিন বছর পর ওই সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ লাখে। আপাতত প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৭ হাজার গাড়ি চলবে বলে ধারণা করছেন সংশ্নিষ্টরা। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে টানেলটি নদীর তলদেশ দিয়ে চলে গেছে আনোয়ারার চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থানে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর নিচে সুড়ঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব। টানেলে টিউব দুটি থাকলেও সংযোগ পথ আছে তিনটি। দুটি সংযোগ পথের কাজ শেষ হয়েছে আগেই। সম্প্রতি শেষ হয়েছে তৃতীয়টির কাজও। এটি ক্রস প্যাসেজ বা বিকল্প পথ হিসেবে প্রথম দুটির সঙ্গে যুক্ত আছে। কোনো কারণে মূল দুটি পথে বাধা তৈরি হলে তৃতীয় এ পথ ব্যবহার করা হবে।চীনের সাংহাই শহরের আদলে তৈরি হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। হাজার কিলোমিটার দূরের সেই শহরের মতো চট্টগ্রামেও নগর থাকবে একটি। কিন্তু নদীর দু'তীরে থাকবে দুটি টাউন। এই মর্ম কথা বুকে নিয়ে টানেলের ¯েøাাগান হলো-ওয়ান সিটি টু টাউন'। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়াল সড়ক। নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। নদীর মাঝ পয়েন্টে এই গভীরতা প্রায় ১৫০ ফুট। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশন্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশকে ২ শতাংশ সুদহারে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে ডলারে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।
Link copied!