শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাকার আম-ছালা সবই গেল?

প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, জানুয়ারি ২০, ২০২২

কাকার আম-ছালা সবই গেল?

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে হেরে ‘আম ও ছালা’ দুটোই হারিয়েছেন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ‘কাকা’ তৈমূর আলম খন্দকার। নির্বাচনে তো হেরেছেনই, বিএনপির সব পদপদবি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে। এ অবস্থায় তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ‘বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি’ দলীয় এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হন তৈমূর। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ জানুয়ারি তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর ৪ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্যপদ থেকে দেওয়া হয় অব্যাহতি। দলে তখনও তার প্রাথমিক সদস্যপদ ছিল। গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে ৬৬ হাজার ভোটে হেরে যান তৈমূর। এরপর তার প্রাথমিক সদস্যপদও কেড়ে নেয় বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হলো। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। শুধু তাই নয়, তৈমূরের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকেও অন্য এক চিঠিতে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারের মাধ্যমে দলের সব স্তরের পদপদবি হারান এই সিনিয়র নেতা। আইনজীবী তৈমূর দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে যুক্ত ছিলেন। বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালে বিটিআরসির চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের পর তৈমূরকে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন তৈমূর। নাটকীয়ভাবে ভোট শুরুর ৭ ঘণ্টা আগে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা, কালো টাকা ছড়ানো এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তৈমূর। পাশাপাশি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, দল ও চেয়ারপারসনের প্রতি আনুগত্য দেখাতেই শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে নিজেকে কোরবানি দিয়েছি। এর পরের নির্বাচনে অংশ নেননি তৈমূর। তৈমূর দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ায় এই পরাজয়ের দায় কোনোভাবেই নিচ্ছে না বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির সিনিয়র নেতা। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তার উচিত হয়নি। দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। কেননা নির্বাচনে অংশ নিলেও কোনো লাভ হবে না। তারা (সরকার) পূর্বের মতো নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে নেবে। আর আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাবে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েও জিততে পারেনি। তাদের জনসমর্থন নেই। এতে দলের ক্ষতি হবে। বিএনপি ‘নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন’-এর দাবিতে যে আন্দোলন করে আসছে, তাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই নির্বাচন বিএনপির জন্য শিক্ষণীয় কারণ ইভিএম দিয়ে নির্বাচনি ফলকে যে ম্যানুপুলেট করা যায়, নাসিক নির্বাচন তার প্রমাণ। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, তৈমূর আলম খন্দকার এবং এ টি এম কামালকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে সারা দেশের নেতাদের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, বিএনপির সিদ্ধান্ত এই সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন করলে তৈমূরের মতো তার আম ও ছালা দুটোই যাবে। এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তৈমূর বলেছেন, এখনও চিঠি পাইনি। তবে আমি যতটুকু শুনছি ঘটনা সত্য। আলহামদুলিল্লাহ। দলের একজন নিবেদিত কর্মী হয়ে এমন পুরস্কার পেতে হবে এটা জাতি বিবেচনা করবে। দলের কোনো পদে না থাকলেও সমর্থক তো আছি। দেশের রাজনীতিতে যে মহামারি চলছে, এটাই তার নমুনা। তিনি বলেন, তৈমূর আলম খন্দকারের পদপদবি লাগে না। বিএনপি রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। এটা নিয়ে মরতে চাই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সময়ের আলোকে বলেন, এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার সব নির্বাচন তাদের মতো করে পরিচালনা করেছে। নির্বাচন করতে হলে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। শুধু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সে কারণেই আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক সময়ের আলোকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত সবারই মেনে চলা উচিত। সিদ্ধান্ত না মানলে দল যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
Link copied!