দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে এর মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে করোনা পরিস্থিতির অবস্থা দেখে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব কথা জানান। তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছেলে-মেয়েদের টিকা দেওয়া গেলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০টি আবাসিক হলের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনার কারণে ১৪ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কোটি কোটি শিক্ষার্থী বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে। অস্বস্তিতে আছেন অভিভাবকরাও। আগামী ২৩ মে থেকে স্কুল-কলেজ এবং ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল সরকার। কিন্তু করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন নিয়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় সেটা আরো দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৯ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের জরিমানা ও মামলা : দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের জরিমানার মুখে পড়তে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা হবে। এমন বিধান রেখে ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ব্যাংক কম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত নতুন এ ধারাটি সংযোজন করা হচ্ছে। এতে ব্যাংক কম্পানির সংকটাপন্ন অবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি আছে। তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালকরা বা যে-ই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাকে বড় জরিমানা দিতে হবে। পাশাপাশি ফৌজদারি মামলাও হবে। কারো এক কোটি টাকা জরিমানা হলে সে জরিমানা দিয়ে বেঁচে যেতে পারে, সে যদি ১০ বা ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সে জন্য পেনাল কোডের আইনও তার জন্য প্রযোজ্য হবে।
ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব আরো জানান, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী মাথাপিছু আয় গত অর্থবছরের চেয়ে ১৬৩ ডলার বেড়েছে। এ বছর মাথাপিছু আয় হয়েছে দুই হাজার ২২৭ ডলার, যা গত অর্থবছর ছিল দুই হাজার ৬৪ ডলার। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরেন। সচিব আরো জানান, আজকে (গতকাল সোমবার) প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪০ বছর ছিল। সে জন্য ক্যাবিনেট থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে তাঁর কার্যক্রমের জন্য।
এসএসএফ আইনে নিরাপত্তা পাবে জাতির পিতার পরিবার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের দৈহিক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সামরিক শাসনের সময় জারি করা অধ্যাদেশের মাধ্যমে উল্লিখিত বাহিনীটি চলছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় এটিকে নতুন করে আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে। এতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দৈহিক নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি। জাতির পিতার পরিবারের সদস্য বলতে জাতির পিতার দুই মেয়ে ও তাঁদের সন্তান। সন্তানদের স্বামী ও স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানরা। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন-২০০৯-এ যা-ই থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। সরকারি গেজেট দিয়ে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরাও এই আইনের অধীনে নিরাপত্তা পাবেন।
এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর আইন-২০২১’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রণীত স্বর্ণ নীতিমালা সংশোধনও অনুমোদন পেয়েছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, নীতিমালাটি সংশোধন হলে দেশের বাইরে থেকে শুধু স্বর্ণ নয়, ডায়মন্ড, প্লাটিনামের মতো মূল্যবান পদার্থের কাঁচামালও আমদানি করা যাবে। এতে দেশে এসংক্রান্ত শিল্প স্থাপন হলে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে বলে মনে করছে সরকার। এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তারও একটি খসড়া প্রতিবেদন মন্ত্রিসভায় তুলে ধরা হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব।