শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবির আসনসংখ্যা কমানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, জানুয়ারি ৫, ২০২২

ঢাবির আসনসংখ্যা কমানো হচ্ছে

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আসনসংখ্যা কমানো হচ্ছে। অন্তত ১ হাজার আসন কমিয়ে ৬ হাজারে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, জাতীয় চাহিদা পূরণ ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বেশকিছু দিন ধরেই সমালোচনা চলছে ঢাবির অবকাঠামোর সঙ্গে আসনসংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থা, গ্রন্থাগার–সুবিধা, শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহণ থেকে শুরু করে সর্বত্র অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ রয়েছে। গত দুই দশকে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ-ইনস্টিটিউট খোলা ও একই অনুপাতে অবকাঠামো না বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির এক সভায় এই সুপারিশ করা হয়। ডিনস কমিটির এ ধরনে সুপারিশকে যুগোপযোগী আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুরুর দিকে। সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে গুণগত শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে পারলেও বয়সের সঙ্গে শিক্ষক সংখ্যা, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা চাহিদা অনুযায়ী বৃদ্ধি না পায়নি। তবে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। ফলে আবাসন, শিক্ষক ও শ্রেণিক্ষ সংকটসহ নানা কারণে ব্যাহত হচ্ছে গুণতগত শিক্ষা। তবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ভৌত অবকাঠামোর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সমন্বয়, জাতীয় চাহিদা পূরণ ও সর্বপোরি গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষার্থী আসন সংখ্যায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউট ও অনুষদগুলোর চাহিদা/প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হয় এবং ভর্তির আসনসংখ্যা যৌক্তিক পুনঃনির্ধারণ বিষয়ে সুপারিশ প্রণীত হয়। এই সুপারিশ অনুমোদনের জন্য পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পেশ করা হবে। সেই সভার সুপারিশক্রমে আগামী ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনঃনির্ধারিত আসন সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালযে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় সে পরিমাণ আবাসন এবং অধ্যায়নের পরিবেশ নেই। আমি আমার বিভাগের কথা বলতে পারি যে, আমরা দুইটা ইউনিট থেকে ১৩০ জন ভর্তি করি এবং কোটা মিলিয়ে ১৪০ জন হয়ে যায়। এখন যদি শতভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে তাহলে অন্তত দশ ভাগ শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তারপরও কিছু শিক্ষার্থী আসে আবার আসে না, তাই আমরা পার পেয়ে যাই। ‘একই অবস্থা আবাসিক হলে, আবাসনের কোনো সুযোগ নেই। আর আবাসনের ব্যবস্থা না করে শিক্ষার্থী ভর্তি তিয়াত্তরের অধ্যাদেশের পরিপন্থী। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চাহিদা মাফিক ও জাতীয় প্রয়োজন অনুযায়ী ছাত্র আসন নির্ধারণ করার। সেখানে কিছু কিছু বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যেমন- মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মেসি, ডেভেলমেন্ট স্টাডিজসহ কিছু কিছু বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আর সব জায়গা থেকে পাঁচ-থেকে দশ ভাগ শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, আইন বিভাগে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসছি আমাদের ছাত্র সংখ্যা বেশি হওয়ায় খুব অসুবিধা হয়। সে জন্য আমাদের আইন বিভাগে আসন সংখ্যা ১৩০ থেকে ১১০-এ কমানো হয়েছে। অর্থাৎ আমরা বিশটা আসন কমালাম। অন্যদিক থেকে যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে সরকার যেভাবে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে, সেসব জায়গায়ও সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার। এ সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে জাতীয় স্বার্থ, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখার জন্য এই সুপারিশ করা হয়েছে।
Link copied!