শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাইওয়ানে যুদ্ধ বাধলে চীনের সঙ্গেই থাকবে রাশিয়া

প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, আগস্ট ৫, ২০২২

তাইওয়ানে যুদ্ধ বাধলে চীনের সঙ্গেই থাকবে রাশিয়া

রুশ সিনেটর ভ্লাদিমির দাজহাবারভ (৬৯) বলেছেন, ‘তাইওয়ানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে চীনের সঙ্গেই থাকবে রাশিয়া। চীনকে সাহায্য করবে। চীনকে (যুদ্ধে) সাহায্য না করার কোনো কারণ দেখি না আমি। কিন্তু চীনের থেকেও আমি ঠিক এমনটাই দেখতে চাই।’ বুধবার স্থানীয় এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন রুশ পার্লামেন্টের প্রভাবশালী নেতা পুতিনঘনিষ্ঠ দাজহাবারভ। এপি। সম্প্রতি মার্কিন নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে, উত্তেজিত বেইজিং-তাইপে সম্পর্ক। পেলোসির এই আকস্মিক সফরের প্রতিবাদে তাইওয়ান সীমান্তে ইতিহাসের সবচেয়ে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। মহড়ার বাহানায় এ সপ্তাহেও চীনের ২৭টি যুদ্ধবিমান দ্বীপটির অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। কিছু দিন আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তাইওয়ানের স্বাধীনপন্থি মানসিকতা কখনো মেনে নেবে না চীন। কোনো বহিরাগত যদি এ বিষয়ে তাইপেকে সাহায্য করে তাহলে ভয়াবহ পরিণাম আছে দেশটির কপালে। প্রস্তুত হয়ে আছে তাইওয়ানও। কয়েক দিন আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন নিজেই অংশগ্রহণ করেন দ্বীপটির যুদ্ধ মহড়ায়। সে সময় বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র চালিয়ে দেখেন সাই। মহড়া শেষে বলেন, তাইওয়ান এখন নিজেকে যেকোনো প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। আজকের এই মহড়া সেটাই প্রমাণ করল। এ ছাড়াও, চীনের সঙ্গে চলতি উত্তেজনার রেশ ধরে নানান ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাইপে। তাইওয়ান এবং চীনের সীমান্তও বেশ ভয়ংকর। দুদিকে পূর্ব এবং দক্ষিণ চীন সাগর। মধ্যে তাইওয়ান প্রণালি। প্রবল ঢেউ আর অনিশ্চিত আবহাওয়াতে ঘেরা ১০০ নটিক্যাল মাইলের সীমানা। দ্বীপটিতে অবতরণ যোগ্য সৈকত মাত্র ১৪টি। কিন্তু আক্রমণের থেকে প্রতিরোধ করা সহজ তাইওয়ানকে। অতীতে বহুবার তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশ্লেষকরা। দ্বীপটির শক্তিশালী প্রতিবেশীকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই রণকৌশল পালটিয়ে নতুন পন্থা বের করল দ্বীপরাষ্ট্রটি। বিভিন্ন আকারের মিসাইল, স্পিড বোট এবং ড্রোন দিয়ে আধুনিকায়ন হয়েছে অস্ত্রভাণ্ডার। পালটা আক্রমণের বদলে আক্রমণ প্রতিরোধেই নজর তাইওয়ানের। আরও জোরদার করা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বহিরাগত শক্তির আক্রমণকে পুরোপুরি টেক্কা দিতে সক্ষম তাইপে। কিন্তু প্রত্ত্যুতরে নাগরিকদের পড়তে হবে হুমকির মুখে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ শুরু করার দুই দিকই ভেবে দেখছেন প্রেসিডেন্ট শি। কারণ যুদ্ধ শুরু হলে ধস নামবে চীনের অর্থনীতিতে। পতন হতে পারে ১৯৪৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা কমিউনিস্ট পার্টির। কিন্তু ক্রমাগত হুমকির পরেও, পেলোসির অঘোষিত তাইওয়ান সফরকে হালকাভাবে নেবে না চীন। যুক্তরাষ্ট্রে এর ওভাল অফিসের লাইনে তৃতীয় মিসেস পেলোসি। এমন জেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার আচরণে অপমানের পালটা জবাব অবশ্যই দেবে চীন। কিন্তু কীভাবে সেটা সময়ই বলে দেবে। এসবের মধ্যে চীনের আন্তর্জাতিক লক্ষ্য কিছুটা ঢাকা পড়ে গেছে। ২০৪৯ সালের মধ্যে নিজের দেশকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পরাশক্তি বানানোর ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর। তবে সংঘাত শুরু হলে ব্যাঘাত ঘটবে সে লক্ষ্যের। অন্য দিকে যুদ্ধ শুরু হলেই একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসবে বেইজিং-এর ওপর। ভেঙে পড়বে অর্থনীতি। শুধু তাই নয়, বাধা পড়বে রপ্তানিতেও। অচল হয়ে পড়বে চীনের বৈদ্যুতিক খাত। দেশটির রপ্তানি খাতে সর্বোচ্চ লাভবান খাত এটি। ক্ষতি হবে তাইওয়ানেরও। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেমি-কন্ডাক্টর উৎপাদকের তালিকার প্রথম দুটি দেশ চীন এবং তাইওয়ান। দুই দেশের সম্মিলিত বাণিজ্য প্রায় ১৬৮ বিলিয়ন ডলারের। নিজেদের রপ্তানি থেকে আয় করা অর্থের ১০ গুণ বেশি অর্থ খোয়াবে বেইজিং। দেশটির মূল অর্থনীতি থেকে বাদ পড়বে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্বে। শুরু হবে কঠোর মন্দা যুগের যা কল্পনাও করতে পারছে না বিশ্ব। আর এর পরিণতি ভোগ করবে চীনের ১.৪ বিলিয়ন মানুষ। অর্থনীতিতে ধস নামলে বেকারত্বের সংখ্যা ছাড়াবে কোটিরও বেশি। দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। ইতোমধ্যেই চীনের শহরগুলোতে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০ শতাংশেরও বেশি। মফস্বল এবং গ্রামের সংখ্যা এখনো অজানা। শুধু তাই নয়, বিশ্বে দেখা দেবে বিভিন্ন প্রকারের সংকট।
Link copied!