শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মকর্তাদের কারণে ভীতি তৈরি হচ্ছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩

কর্মকর্তাদের কারণে ভীতি তৈরি হচ্ছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

ডেইলি খবর ডেস্ক: ঘুসের টাকা হাতে নিয়ে মরে যাবে তবুও টাকা নিবেই। কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ যুগযুগ ধর্ইে চলছে। অবৈধ আয়ে আবার অনেকে বহুবার হজ্ব-ওমরাও করেছেন। কাস্টমস কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ ইউসুফ ঘুসের টাকায় রাজধানীর গুলশানে কিনেছেন ডুপলেক্্রফ্রাট-জিগালতলায় বাড়ি,সাভারে কারিকারি বিঘা জমি, গ্রামের বাড়ি দেলদোয়ারে কিনেছেন শতশত বিঘা কৃষিজমি। পড়ালেখা করতে ছেলেদের পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। এরপরও ঘুসের টাকা হাতে নিয়েই করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরপারে পারি জমিয়েছেন ওই কাষ্টমস কর্মকর্তা ইউসুফ। এখন তার স্ত্রী মাসুদা বেগম এসব অবৈধ উপায়ে কামানো সম্পদ রক্ষা করা নিয়ে বিপাকে। নিজেদের আখের ঘুছিয়ে নেয়া রাজস্ব কর্মকর্তাদের অবৈধ আয়-রোজগার নিয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি পরছে বলে অর্থনীতিবিদরাসহ অনেকেই মনে করেন। রাজস্ববোর্ড সুত্রগুলো জানায় এসব দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি ছাড়া ঘুসের চিত্র বদলাবে না। দায়িত্বে অবহেলা, ঘুস গ্রহণ ও শুল্ক ফাঁকিতে সহায়তা করায় কাস্টমসের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে সাজা দেওয়া হলেও তবুও চিত্র বদলায়নি। তাদের কাউকে বেতন ধাপ অবনমনও করা হয়েছে, তাতেও কাজ হচ্ছে না। এ যেনো লেজে ঘি মাখিয়ে দিলেও যেমন লেজ সোজা হয় নার মত দেখতে। আবার কাউকে তিরস্কার অথবা চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত দুই বছরে দেওয়া হয়েছে এসব শাস্তি। এছাড়া আরও অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চলছে বিভাগীয় তদন্ত। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘুসখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না গেলে ঘুসের চিত্র বদলানো সম্ভব নয়। এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কারণেই করদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম। গত শনিবার রাজধানীতে এক কর্মশালায় তিনি একথা বলেন।করদাতাদের ভীতি দূর করতে হবে এবং সেজন্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। এনবিআর প্রধান আরও বলেন, করের উচ্চহারের কারণে আগ্রহ হারান করদাতারা। এ কারণে রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতা দ্রæত বাড়লেও তাদের করের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে এনবিআর। তাদের করের আওতায় আনতে আইন প্রয়োগ এখনই সঠিক হবে না বলেও মত দেন তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন,মধ্যম আয়ের দেশে চলে যাচ্ছি বলে উল্লসিত হচ্ছি, বিপদটা দেখতে পাচ্ছি না। ট্যাক্স জিডিপির রেশিও নিয়ে হতাশ কিংবা চিন্তিত নিয়ে এনবিআর। শুধু ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় সম্ভব না, ভারী শিল্পকারখানা তৈরি করতে হবে। এদিকে দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে আমদানি-রপ্তানিকারকরা জিম্মি। ঘুস-বকশিশ ছাড়া একটি ফাইলও টেবিল থেকে নড়ে না। চাহিদামাফিক ঘুস না দিলে পণ্যের এইচএস কোড ঠিক নেই, পণ্যের সঙ্গে বিবরণে মিল পাওয়া যায়নিসহ নানা ছুতায় হয়রানি করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলেও নমুনা রাসায়নিক টেস্টের নামে হয়রানি করা হয়। ব্যবসায়ীদের অভিমত-দুর্নীতির তদন্ত পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা দরকার। কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত কাস্টমস কর্মকর্তাদের দিয়ে না করিয়ে অন্য ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দিয়ে করালে তদন্তের নিরপেক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা দুটোই বাড়বে। এখন কাস্টমস কর্মকর্তার তদন্ত কাস্টমস কর্মকর্তারা করার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বিলম্ব করা হয়। এতে অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। ওই সভায় আয়কর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের চলমান বিভাগীয় মামলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান সব বিভাগীয় মামলা দ্রæত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আলোচিত দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কর্মকর্তাদের (প্রশাসন ক্যাডার) দিয়ে তদন্ত করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২ বছরে সাজাপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তাদের তালিকা করেছে এনবিআরে। তালিকা অনুযায়ী, রাজস্ব আহরণের নামে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের মামলা, জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়ে অবৈধভাবে কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ ও আত্মসাতের অভিযোগে উপকমিশনার জাহিদুল ইসলামকে ‘তিরস্কার’ দন্ড দেওয়া হয়।  
Link copied!