শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ হচ্ছে প্রতীক্ষার প্রহর

প্রকাশিত: ০৬:০৭ এএম, মে ৫, ২০২১

দীর্ঘ হচ্ছে প্রতীক্ষার প্রহর

দেশে দ্বিতীয় ডোজের জরুরি চাহিদা মেটাতে করোনার টিকা সংগ্রহের প্রচেষ্টায় এখনো কোনো সুখবর নেই। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সরবরাহ সংকটের কারণে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারছেন না প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি। জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সাড়া মেলেনি। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়ে আজকালের মধ্যে জবাব দেওয়া হতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার প্রক্রিয়াগত বিলম্বের আশঙ্কা রয়েছে। ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণের পর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সরবরাহ বন্ধ করে দেয় দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সমর্থনপুষ্ট কোভ্যাক্স উদ্যোগে টিকার সংগ্রহ পর্যাপ্ত নয়। ফলে কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশের খুব শিগগির টিকা পাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। এ পরিস্থিতিতে চীনের উপহারের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা ঈদের আগেই দেশে আসছে। যদিও চীন থেকে টিকা কেনার দরকষাকষি এখনো শেষ হয়নি। ফলে কেনা টিকা কবে নাগাদ এসে পৌঁছাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। রাশিয়া থেকে টিকা কেনার চুক্তির খসড়া এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে আছে। এ ব্যাপারে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হবে। তারপর অর্থ পরিশোধ করলে রাশিয়া টিকা পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে। গোটা প্রক্রিয়া কত দ্রুত সম্পন্ন হয় তার ওপর নির্ভর করছে কত তাড়াতাড়ি রাশিয়ার টিকা পাওয়া যাবে। জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার বলেছেন, ‘রাশিয়ার টিকার খসড়া এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আছে। যত তাড়াতাড়ি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শেষ হবে তত তাড়াতাড়ি চুক্তি সই করা সম্ভব হবে। চুক্তি শেষে পেমেন্ট করার পর উৎপাদন শুরু করবে।’ মন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকে যে ঋণ পেয়েছে; রাশিয়া থেকে টিকা কেনায় এই অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। তিনি বলেন, টাকার কোনো সমস্যা হবে না। প্রধানমন্ত্রী টিকা কেনার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, টিকা কেনার জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চীনের উপহারের টিকা ঈদের আগেই আসবে। তবে চীন থেকে টিকা কেনার ব্যাপারে এখনো দরকষাকষি শেষ হয়নি। প্রথম ডোজ দেওয়ার পর যারা দ্বিতীয় ডোজের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সরবরাহ পাচ্ছেন না, তাদের টিকা সংগ্রহ হয়েছে কি না-জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তাদের টিকার জন্য আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি। তারা কোনো উত্তর দেয়নি। তারা নিজেরাই খারাপ অবস্থায় আছে। আমরা শুনেছি, কিছু কিছু দেশের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মজুত আছে। আমরা ওই সব দেশের কাছে অনুরোধ করেছি। তারা খুব কম পরিমাণে ২০ হাজার কিংবা এক লাখ ডোজ দিতে চেয়েছে। আমাদের প্রয়োজন লাখ লাখ ডোজ। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও চেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ভারত ও ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। কী বলে শুনি। নিশ্চয়ই আমাদের অনুরোধের একটা জবাব দেবেন।’ কোভ্যাক্স উদ্যোগ থেকে কোনো টিকা পাওয়া যাবে কি না-জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে খারাপ অবস্থার কারণে সেরাম থেকে কোভ্যাক্স টিকা পাচ্ছে না।’ কোভ্যাক্স ইনিশিয়েটিভে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মডার্না ৫০ কোটি ডোজ টিকা দেবে বলে চুক্তি করেছে। চুক্তি মোতাবেক, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ কোম্পানিটি সবচেয়ে কম দামে কোভ্যাক্সে তিন কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে। অবশিষ্ট ৪৬ কোটি ৬০ লাখ ডোজ সরবরাহ করবে ২০২২ সালে। অনেক দেশকে টিকার জন্য ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। উচ্চ আয়ের দেশ যারা বিশ্বের জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ বর্তমানে তাদের হাতে মোট টিকার ৫০ শতাংশ। কোভ্যাক্স চলতি বছরেই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে দুই বিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই পরিমাণ টিকা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ২০ ভাগ। এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্স চার কোটি ৯০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। কোভ্যাক্সে টিকার সরবরাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করার কারণে। কোভ্যাক্সের বড় নির্ভরশীলতা ছিল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রস্তুত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ওপর। এখন তাই কোভ্যাক্সকে অন্য উৎসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে অন্য উৎসগুলোর সরবরাহ সীমিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছয় কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অন্য দেশে সরবরাহ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। এখান থেকে ভারত কত ডোজ যাবে তা স্পষ্ট নয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পাঠাতে হলে দেশটির ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন লাগবে। বাল্টিমোরে বায়ো সলুশন প্ল্যান্টে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রস্তুত করা হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই প্ল্যান্টে বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ। যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে পাঠানোর আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাগুলো নিরাপদ কি না, তা যাচাই করতে চায়। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদনের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এক কোটি ডোজ বিদেশে পাঠাতে পারে। বাংলাদেশ এসব টিকা কেনার অনুরোধ করলেও এত অল্প পরিমাণ টিকা থেকে বাংলাদেশ ভাগে কিছু পাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। অবশিষ্ট পাঁচ কোটি ডোজ উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। আগামী কয়েক মাসের আগে এগুলো রপ্তানি করা যাবে না। ফলে বাংলাদেশের জরুরি প্রয়োজন মেটানো কঠিন। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভেন্টিলেটর, পিপিই, অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধির ওষুধ উপহার হিসাবে দিতে চায়। বাংলাদেশ অবশ্য এসব উপহার নেওয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টিকা কেনার প্রতি বেশি আগ্রহী। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা কিনতে বাংলাদেশ থেকে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করা হয়। প্রতিমাসে ৫০ লাখ টিকা দেওয়ার কথা ছিল। ভারত গত জানুয়ারি মাসে ৫০ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ ডোজ টিকার সরবরাহ করে। যদিও ভারত মার্চে দুই কোটি ৮০ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বিদেশে রপ্তানি করেছে। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশে মার্চে ভারত চুক্তির কোনো টিকা দেয়নি। এপ্রিলে ভারতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে তারা টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।
Link copied!