শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ

প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, জানুয়ারি ১১, ২০২২

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ

দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক অবস্থা হতাশাজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। খেলাপির কারণে প্রভিশন খাতে আটকে গেছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এ টাকা থেকে কোনো আয় হচ্ছে না। বেড়ে গেছে অকার্যকর ঋণ। এতে একদিকে আয় কমেছে,অন্যদিকে বেড়েছে ব্যয়। খেলাপি ঋণ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ ঋণ জালিয়াতি। মূলত নয়টি নন-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের ঋণ জালিয়াতির কারণে সার্বিকভাবে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি-জালিয়াতির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আমানতকারীরা। এসব প্রতিষ্ঠান আমানত ফেরত দিতে না পারায় গ্রাহকদের আস্থা হারাচ্ছে। ঋণ গ্রহীতারাও চাহিদামতো ঋণ বা লিজ না পেয়ে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সব মিলে অর্থনীতিতে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অবদান কমে যাচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে চলে। বর্তমানে দেশে ৩৪টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করলেও জানা গেছে, এর মধ্যে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আস্থা অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাকিদের অবস্থা কেন নড়বড়ে হলো,তা নিবিড়ভাবে পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। মানুষ সঞ্চয় করে মূলত লাভের আশায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে,প্রত্যাশিত লাভ তো দূরের কথা, আমানতকারীদের আসলের ঘরেই টান পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকার অনুমোদিত এসব নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে; একইসঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি হবে ক্ষতিগ্রস্থ। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি অর্থনীতির এক দুষ্ট ক্ষত। এ ঋণের বড় অংশই ইচ্ছাকৃত। চিন্তর বিষয় হলো, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের টাকা আদায়ে আইনি সহায়তা পাওয়া যায় না। তাই অধিকতর যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায়ে আরও বেশি কঠোর হওয়া প্রয়োজন। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও জালিয়াতি রোধ করে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা জরুরি।  
Link copied!