শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পার্টনার খুঁজছে শিওরক্যাশ

প্রকাশিত: ০৬:০০ এএম, এপ্রিল ১৯, ২০২১

পার্টনার খুঁজছে শিওরক্যাশ

রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘শিওরক্যাশ’ গত মার্চ মাস থেকে তাদের কার্যক্রম ছোট করে ফেলেছে। পুরোপুরি বন্ধ না হলেও ছোট পরিসরে কার্যক্রম চালানোর ফলে ভোগান্তি হচ্ছে গ্রাহক পর্যায়ে। তবে এটির প্রধান নির্বাহী শাহাদাত খান জানালেন, শিওরক্যাশ বন্ধ হয়নি। বরং নতুন কোনো পার্টনার নিয়ে বড় পরিসরে আসবে। এ সেবা এত দিন পরিচালনা করে আসছে প্রগতি সিস্টেমস। আর তাদের সঙ্গে আছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স, যমুনা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস পরিচালনা করে আসছিল তাদের মাধ্যমে। শাহাদাত খান বলেন, ‘সেবা বন্ধ হয়নি, বন্ধ হয়ার কোনো ব্যাপার এখানে নেই। এটি একটি চলমান সেবা। রূপালী ব্যাংকসহ যেসব ব্যাংকের লাইসেন্স আছে, সেসব ব্যাংক এটা পরিচালনা করে৷ আমরা তাদেরকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। সফটওয়্যার আমাদের আর সার্ভিসটি ব্যাংকের।’ তিনি বলেন, রূপালী ব্যাংক তো বন্ধ হয়ার মতো কোনো ব্যাংক নয়। তাই এটা পুরোপুরি রূপালী ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে চলছে। কোথাও শিউরক্যাশ সেবা কমায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমদের সেবার পরিসর হয়ত ছোট, তবে আমরা কোথাও সেবা কমাইনি।’ তবে মাঠ পর্যায়ে সেবা বন্ধ হয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেবা বন্ধ হওয়ায় এখন এই চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে বৃত্তি, ভাতা বিতরণ, ভর্তুকি প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে যে সেবা দেয়া হচ্ছিল, সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ায় আগে শিওরক্যাশের কাছে ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি, আখচাষিদের ভর্তুকি, পল্লী বিদ্যুতের বিল, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বেতনসহ বিভিন্ন সেবা ছিল। তবে শিওরক্যাশ সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে। শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে আগে এই উপবৃত্তি বিতরণ বিষয়ে সরকার জটিলতায় পড়লে তখন ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’কে বেছে নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে শিওরক্যাশের সময়ের জমে থাকা একটি প্রান্তিকের ভাতা বিতরণ করেছে এখনকার সময়ের জনপ্রিয় এমএফএস অপারেটর ‘নগদ’। শাহাদাত খান জানান, প্রাথমিক শিক্ষার উপবৃত্তির টাকা এখন আর শিওরক্যাশের মাধ্যমে যাচ্ছে না। কিন্তু অন্য যা লেনদেন ছিল, সেটা এখনও আছে। অন্য আর কী কী সেবা শিওরক্যাশের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এখনও সুগার কমপেশন-এর পেমেন্ট হচ্ছে, ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি হচ্ছে, উইমেন মিনিস্ট্রির পেমেন্ট আছে, কলেজের পেমেন্ট আছে।’ তাহলে শিওরক্যাশে এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার সেবার ধরন একটু চেঞ্জ হচ্ছে কিন্তু নাথিং মোর দ্যান দ্যাট।’ জানা গেছে, শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে রূপালী ব্যাংক। কারণ, ব্যাংকটি শিওরক্যাশের গ্রাহক ও সেবার আকার বাড়িয়েছে। রূপালী ব্যাংকসহ বাংলাদেশ কমার্স, যমুনা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সেবা যাতে চালু থাকে, সে জন্যে ‘নগদ’-এর পক্ষ থেকে এই চার ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে যে ভোগান্তি হচ্ছে সে বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে শাহাদাত খান বলেন, ‘আসলে কী ধরনের ভোগান্তি হচ্ছে, সেটা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন।’ অনেক জায়গায় সেবা পাওয়া যাচ্ছে না, জানানো হলে তিনি বলেন, ‘গ্রাহক সেবা পাচ্ছে না এটা একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। টেলিটকের ক্ষেত্রে যেমন সব জায়গায় গ্রাহক সেবা পাচ্ছে না এটা বলা যায় না। তাদের সেবা কিন্তু চলছে। গ্রাহক যদি কমে আসে, সেক্ষেত্রে সেবা কম পাবে। বেশি আসলে বেশি পাবে। রূপালী ব্যাংক এখনও গ্রাহকদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’ এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব শাখাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। মূলত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসেই সেবাটি ব্যাহত হতে শুরু করে। তবে তার আগেই গত কয়েক মাস ধরে সেবাটি গুটিয়ে আনছিল প্রগতি সিস্টেমস। সাম্প্রতিক সময়ে মাঠপর্যায়ে কয়েক দফা কর্মী ছাঁটাই করেছে অপারেটরটি। বর্তমান সময়ে এই খাতের প্রতিযোগিতা আর প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনে অনেকটা পিছিয়ে পড়াতেই ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছিল না অপারেটরটি। পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেড এখন তাদের লাইসেন্সকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারে (পিএসপি) রূপান্তর করতে আবেদন করেছে। আর এর শর্ত হিসেবই পিএসও সেবা আগে বন্ধ করতে হতো। সেবাটি বন্ধ হওয়ার আগেও তাদের সঙ্গে প্রায় ১০ লাখ সক্রিয় গ্রাহক ছিল। তবে সব মিলিয়ে ২ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার গ্রাহক শিওরক্যাশে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। এক সময় মাসে কয়েক শ কোটি টাকার লেনদেন হলেও জানুয়ারিতে তা নেমে আসে ১৮০ কোটি টাকায়। আর ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ১১৪ কোটি টাকায়।
Link copied!