শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিশোধে উন্মত্ত তালেবান

প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১

প্রতিশোধে উন্মত্ত তালেবান

প্রতিশ্রুতি দিয়েও রক্ষা করছে না তালেবান। প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। আফগান সেনাবাহিনীর সাবেক যোদ্ধা ও সরকারি কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করছে। কাউকে রাস্তায় ফেলে গুলি করে, কারও বা জবাই করে। আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের পরিবার-পরিজনদের। এমনকি তাদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না আট-দশ বছরের শিশুরাও। দেশজুড়েই ঘটছে ভয়ানক ও লোমহর্ষক এসব ঘটনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার উদ্বেগ জানালেও তা কানেই তুলছে না গোষ্ঠীটির নেতারা। গত মাসে ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে কট্টরপন্থি এই গোষ্ঠীটি। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পাশাপাশি কারও ওপরই ‘প্রতিশোধ নেওয়া হবে না’ বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ক্ষমতার প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বিরোধীদের ওপর তাদের প্রতিশোধ আরও বাড়ছে। আফগান বাহিনীর যেসব যোদ্ধা তালেবান নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, তাদের নাম-পরিচয় গোষ্ঠীটির হাতে রয়েছে। ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কাবুলে অনতিদূরে পঞ্জশির উপত্যকা দখলের পর প্রতিরোধ বাহিনীকে সহযোগিতা করায় অন্তত ২০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে তালেবান যোদ্ধারা। এর মধ্যে এক নিরস্ত্র বন্দিকে রাস্তার পাশে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য মতে, তালেবানের এই প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে কাবুলের পতনের বেশ আগে থেকেই। তবে কাবুল দখলের পর নিশ্চিতভাবেই বেড়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সহায়তায় অনেকেই দেশ ছেড়েছে। যারা পারেনি তারাই তালেবানের টার্গেটে পড়েছে। গত সোমবার আফগান সেনাবাহিনীর সাবেক স্নাইপার যোদ্ধাকে তার স্ত্রী পরিবার-পরিজনের সামনেই হত্যা করা হয়েছে। নুর নামের এই যোদ্ধা ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সের কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও আফগান সেনাবাহিনীর সিএফ৩৩৩ ইউনিটের সদস্য ছিলেন। কাবুলের পতনের পর রাজধানীতেই তার বোনের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সোমবার সেখান থেকে খুঁজে বের করে রাস্তায় এনে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। তালেবানের হাত থেকে বাদ পড়ছে না ছোট্ট ছোট্ট শিশুও। পশ্চিমাদের সহযোগিতা করা আফগানদের না পেলে তাদের ছেলেমেয়ে কিংবা বাবা-মা ও ভাই-বোনদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জ্যা মেরি থ্রোয়ার মার্কিন এনজিওকর্মীর বরাত দিয়ে ন্যাশনাল রিভিও জানিয়েছে, তালেবান এমন অন্তত দুই শিশুকে হত্যা করেছে, যাদের একজনের বয়স ৯ ও আরেকজনের ১০ বছর। তালেবানের এই প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট বলেন, তালেবান সাবেক আফগান সেনা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা অব্যাহত রেখেছে। জেনেভায় সোমবার হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সাবেক আফগান সরকার কিংবা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে এমন ব্যক্তিদের খোঁজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা।
Link copied!