শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পড়াশোনার সঙ্গে গুরুত্ব পাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য

প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১

পড়াশোনার সঙ্গে গুরুত্ব পাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য

দীর্ঘ বিরতির পর সশরীর ক্লাসে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। এই ফেরার মধ্য দিয়ে তাদের জন্য শুরু হচ্ছে করোনাকালে এক নতুন পরীক্ষা। দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিরচেনা অনেক কিছুতেই বদল আসছে। ঘরবন্দি শিশু-কিশোরের চিন্তা-চেতনায় এসেছে নানা পরিবর্তন। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পারায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বাড়তি চাপ দেওয়া হবে না। আনন্দঘন পরিবেশে খেলাধুলা ও বিনোদনের মাধ্যমে তাদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলা হবে। পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন পর ক্লাস ফেরা শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক ব্যবস্থা রাখাসহ তাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। স্কুলে তো শিশুদের শুধু লেখাপড়াই শেখানো হয় না, সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলা বা সামাজিক হতেও শেখানো হয়। যেকোনো শিশুই কিছুদিন স্কুলে যাওয়ার পর তার মা-বাবা শিশুর আচরণ খুব ভালোভাবেই লক্ষ করে থাকেন। দেড় বছরের করোনাকালে লম্বা ছুটি শিক্ষার্থীদের অনেক কিছুতেই প্রভাব ফেলেছে। অনেকে স্বজন হারিয়েছে। আবার কেউ কেউ শহর বদলের কারণে হয়তো নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে। এ চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা অল্প কিছুদিনে সব কিছু আত্মস্থ করতে শিখে যাবে বলে মনে করছেন মনোবিজ্ঞানীরা। এটিকে তারা ব্যাখ্যা করছেন মনোবিজ্ঞানের কমপেনসেশন থিউরির আলোকে। তাদের মতে, করোনাকালে ১৭ মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীরা আরও অধিকতর আগ্রহী হবে, পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন সময়ের আলোকে বলেন, করোনা সংক্রমণ যদি আর না বাড়ে, আমরা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে পারি তাহলে শিক্ষার গতি আরও বাড়বে। শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় আগ্রহ বাড়বে। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশে সব মানুষের কিছু মৌলিক মনস্তাত্ত্বিক দিক একরকম। যেমন হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ। আবার কিছু বিষয় অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। করোনায় দেশের অর্থনীতি এখনও মজবুত রয়েছে। এ জন্য করোনাকালে আমাদের শিশুদের মনোবিকাশ খুব বেশি বাধাগ্রস্ত হয়নি। কমপেনসেশন থিউরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি ধরি কোনো মানুষের একটি পা নেই, তিনি তার এই দুর্বলতা কাটিয়ে জীবনে সফলতা পেতে মেধার চর্চাসহ অন্যান্য চেষ্টা বাড়িয়ে দেন এবং অন্যদের তুলনায় এগিয়ে যান। তেমনি ১৭ মাসের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীরা আরও অধিকতর পরিশ্রমী হবে। নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা কলেজের প্রভাষক মু. মাইন উদ্দিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কলেজে প্রবেশের পর শারীরিক দূরত্বসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কলেজে ঢুকেই প্রথমে সাবান পানি দিয়ে শিক্ষার্থীরা হাত ধোবে। সব সময় মাস্ক পরতে হবে। তিনি বলেন, মেয়েদের পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে নজর রাখা হবে। প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন ক্লাস হবে যেখানে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের বিষয়ে শিক্ষকরা আলোচনা করছেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম মাসে লেখাপড়ার বাড়তি চাপ দেওয়া হবে না। আনন্দঘন পরিবেশে খেলাধুলা ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলা হবে। ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের হোসেন ও জুনায়েদ হোসেন বলেন, অনেক দিন পর স্কুল খুলছে। বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস করব, খেলাধুলা করব এটা ভেবেই বেশ খুশি লাগছে।
Link copied!