শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, জুন ২৩, ২০২২

বছরে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে নদীর পানি। সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর ও কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যার চরম অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে উঠে এসেছে, গত ৬ বছরে যে বন্যা হয়েছে তাতে প্রতিবছর গড়ে বন্যায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে জলবায়ু বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের বন্যার ভয়াবহতা বেশি। তাই এবারের ক্ষতি আগের যেকোনো বারের তুলনায় বেশি হবে। সম্প্রতি বিবিএসের জরিপের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে (বিডিআরএস) বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল- এই ছয় বছরে দেশে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বছরে গড় ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ওই ছয় বছরে বিভিন্ন দুর্যোগে ৭৫ লাখ খানা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বন্যায়- ৫৫ শতাংশ। এর বাইরে ঘূর্ণিঝড়ে ৩৪, শিলাবৃষ্টিতে ১৭ এবং বজ্রপাত ও বজ্রঝড়ে ১৪ শতাংশ খানা আক্রান্ত হয়েছে। জরিপের তথ্য মতে, দুর্যোগে মোট ক্ষতি ৩০ হাজার কোটি টাকার ৫৫ শতাংশ বন্যায় ক্ষতি। অর্থাৎ প্রতিবছর বন্যায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং ২০ হাজার কোটি টাকার কম ক্ষতি হচ্ছে। বিবিএস অবশ্য জানায়, ক্ষতির এ হিসাব শুধু দুর্যোগপ্রবণ এলাকার। পুরো বাংলাদেশের নয়। জরিপে আরও ওঠে আসে, ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে দুর্যোগে ক্ষতি ব্যাপকভাবে বাড়ে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ক্ষতি হয় ১৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। পরের ছয় বছরে তা ১০ গুণ বেড়ে যায়। তাই এবারের আর্থিক ক্ষতি আগের জরিপের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। বিবিএস জানায়, জরিপে দেশের সব জেলার দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০টি খানা থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, আগের ছয় বছরের তুলনায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত খানার সংখ্যাও বেড়েছে। বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বন্যায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। অথচ আগের ছয় বছরে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা। জরিপে মানুষের ক্ষতির হিসাবের ক্ষেত্রে বিবিএস জমির অবক্ষয় মূল্য ধরেছে। সেখানেই ক্ষতির হার বেশি দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৫৩ শতাংশ। আর শস্য, প্রাণিসম্পদ, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতে সম্মিলিত ক্ষতি মোট ক্ষতির ৩৯ শতাংশ। এর বাইরে বসতবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘর ও অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতির মুখে পড়েছে মানুষ। কৃষি খাতের মোট আর্থিক ক্ষতি বিবিএস দেখিয়েছে ৭১ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতির বাইরেও দুর্যোগের একটি পরোক্ষ ক্ষতি আছে। সেটি হলো- মানুষের আহত হওয়া ও রোগ ছড়িয়ে পড়ায় চিকিৎসার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আহত অথবা অসুস্থ হয়ে গত ছয় বছরে ২৪ লাখ মানুষকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাদের মোট খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। মাথাপিছু গড় চিকিৎসা ব্যয় ছিল ১৬ হাজার টাকার বেশি। জরিপ বলছে, গত ছয় বছরে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার খানার সদস্যরা দুর্যোগের কারণে গড়ে ২১ দিন কর্মহীন ছিলেন। আগের ছয় বছরে তা ছিল গড়ে ১২ দিন। দুর্যোগের কারণে শিক্ষাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জরিপে দেখা যায়, ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে শিশুদের স্কুলে অনুপস্থিতির প্রধান কারণ ছিল অসুস্থতা ও আহত হওয়া। এর হার ছিল ৭২ শতাংশ। এর বাইরে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি ও বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেও শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, সব ক্ষতি পরিমাপ করা যায় না। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতি হলে সেটা বলা যায়। কিন্তু এ সময়ে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ আছে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়েছে এ ধরনের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি আছে যেটা পরিমাপযোগ্য নয়। তবে বিবিএস কী কী ইন্ডিকেটর নিয়ে ক্ষতি হিসাব করেছে সেটা তারা জানে। তবে এটা বলা যায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বন্যার ভয়াবহতা বেশি। তাই ক্ষতিও বেশি হওয়া স্বাভাবিক। জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে জরিপ করা বিবিএসের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৫-২০ সালের দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে জরিপ করা হয়েছিল। সেখানে গত ছয় বছরে দুর্যোগে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির তথ্য উঠে এসেছিল, যা বছরে গড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা পড়ে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশই ছিল বন্যায় ক্ষতি।
Link copied!