শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারিতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, অনুমোদনের অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, জুন ১৬, ২০২১

বেসরকারিতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, অনুমোদনের অপেক্ষায়

এবার বেসরকারি খাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং দেশের বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অত্যন্ত কম সময়ে এবং সহজে করা সম্ভব। ইতোমধ্যে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দুটি অ্যান্টিজেন কিটস ব্যবহারে অনাপত্তি দিয়েছে। যে কিটসগুলোর সংবেদনশীলতা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। তবে এ পরীক্ষা অবশ্যই ল্যাবরেটরিতে করতে হবে। যে ল্যাবরেটরি মান ‘বি’ শ্রেণির নিচে নয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বেসরকারি খাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারিকালে আরটি-পিসিআর (রিয়েল টাইম পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন) পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা জরুরি। যদিও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিগত কয়েক মাস ধরে মাত্র ১০০ টাকায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে। বর্তমানে বেসরকারি এ পরীক্ষা চালুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ইতোমধ্যে দুটি অ্যান্টিজেন কিটস ব্যবহারের অনাপত্তি দিয়েছে। বর্তমানে সব খরচসহ এ কিটসের আমদানি মূল্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। এ দামের সঙ্গে বেসরকরি স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যান্য খরচসহ সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় পরীক্ষা করা যেতে পারে। এর আগে ১১ মার্চ তারিখে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত এক স্মারকে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালার ‘ক’ শ্রেণিতে বলা হয়েছে, ১. কোভিড-১৯ উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা যাবে। ২. অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলে উক্ত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত বলে বিবেচিত হবে। ৩. নেগেটিভ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ‘এনএএটি (নিউক্লিয়ার এসিড এমপ্লিফেকেশন টেস্ট- আরটি পিসিআর/ জিনএক্সপার্ট)’ এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে হবে। ৪. কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি হলে নীতিমালায় উল্লিখিত নির্দেশনা ব্যবহার করতে হবে। ৫. উপসর্গসহ কোনো ব্যক্তি অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী তার বিগত ১৪ দিনের সংক্রমিত হওয়ার পরিস্থিতির পর্যায়গুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। নীতিমালার ‘খ’ শ্রেণিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ উপসর্গ নেই অথচ বিগত ১৪ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে গিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের এ শ্রেণিতে বিবেচনা করতে হবে। ২. এক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলেও ‘এনএএটি’ দ্বারা রোগ নির্ণয় করতে হবে কিনা সেটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ক্লিনিক্যাল পর্যালোচনা করে ঠিক করবেন। ৩. অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। নীতিমালার ‘গ’ শ্রেণিতে বলা হয়েছে, ১. একজন উপসর্গহীন ব্যক্তি যিনি গত ১৪ দিন কোনো কোভিড রোগীর সংস্পর্শে যাননি তাকে এ শ্রেণিতে বিবেচনা করতে হবে। ২. এক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুধু স্ক্রিনিং পরীক্ষা হিসাবে বিবেচিত হবে। ৩. অ্যান্টিজেন পরীক্ষা নেগেটিভ হলে উক্ত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত নয় বলে বিবেচিত হবেন। ৪. কমিউনিটিতে সংক্রমণের হার বেশি হলে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেও নেগেটিভ হওয়ার পর ‘এনএএটি’ করতে হবে কিনা সেটি বিবেচনা করতে হবে। ৫. পজিটিভ অ্যান্টিজেনের ক্ষেত্রে ‘এনএএটি’র মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। ৬. ‘এনএএটি’ দ্বারা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অথবা না করা গেলে ১৪ দিন পর্যন্ত ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। নীতিমালার ৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগতভাবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা দ্রুত রোগ শনাক্ত করে। যা অতি সহজে এবং স্বল্পসময়ে ব্যবহারযোগ্য। কিন্তু এটি কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি নিজে ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু সরকার নির্ধারিত উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের তত্ত্বাবধানে এটি ব্যবহার করা যাবে। অ্যান্টিজেন কিটস ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন হবে এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা পুরোপুরি মেনে চলা সাপেক্ষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ পরীক্ষা করতে পারবে। এখানে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি পর্যায়ে এ পরীক্ষা শুধু ল্যাবরেটরিতেই করা যাবে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ‘বি’ শ্রেণির ল্যাবরেটরি হতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ‘ইনডিএক্টিভ কস্ট’র আলোক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত দাম অনুসরণ করতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত কিটস ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত সব তথ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখায় প্রতিদিন পাঠাতে হবে। সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সার্ভিলেন্স সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর। জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতে অ্যান্টিজের পরীক্ষার জন্য নীতিমালাসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো বাকি রয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলেই বেসরকারি খাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করা যাবে।
Link copied!