শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সংসদে তোলপাড়

প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১

বেহাল স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সংসদে তোলপাড়

করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা, স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয়হীনতা, অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় সংসদে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় চিকিৎসক সংকট, স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা এবং সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সমস্যা নিয়েও বক্তব্য ও পালটা বক্তব্য চলে। বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই বুধবার জাতীয় সংসদে এ ধরনের বক্তব্য দেন। চিকিৎসকরা কেন রাজনীতি করবে সেই প্রশ্নও উঠে আসে। চিকিৎসার বিল দিতে না পারায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী আটকে রাখে বলেও তারা অভিযোগ করেন। অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দেন। দেশের নাগরিক হিসাবে চিকিৎসকদেরও রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সমালোচনা আমাকে শক্তিশালী করে। দেশে দ্রুতই করোনা ভ্যাকসিন তৈরি হবে বলে জানান তিনি। এদিনের অধিবেশনে ঢাকা শিশু হাসপাতালকে ইনস্টিটিউট করতে বিল পাস হয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদে ‘মেডিকেল কলেজ গভর্নিং বডি বিল’ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাশের সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিএনপি করে গিয়েছিল ড্যাব, আওয়ামী লীগ এসে করেছে স্বাচিপ। সেক্ষেত্রে আমরা কী কারণে বসে থাকছি? এই বিলে যদি বলা হতো ডাক্তার এবং বৈজ্ঞানিকরা রাজনীতি করতে পারবে না তাহলে খুশি হতাম। কিন্তু সেটা বলা হয়নি। ডাক্তাররা যদি এই দেশে রাজনীতি করে তাহলে আমরা কী করব? আমাদের কাজটা কী? ওনারা চলে আসুক রাজনীতি করতে। যারা ভালো ছাত্র তারা ডাক্তারি পড়ে, কিন্তু তারা রাজনীতি করায় আমরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার চিত্র দেশবাসী জানে। কেবলমাত্র মন্ত্রী জানেন না। আমরা আগেও এই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছি, মন্ত্রী হিসাবে তিনি ব্যর্থ। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে হবে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, দেশে হাসপাতাল আছে। চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা সরঞ্জাম আছে, কিন্তু বছরের পর বছর পরে থাকতে থাকতে নষ্ট হচ্ছে, দেখার কেউ নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, স্বাস্থ্য খাতে চলছে অনিয়ম, লুটপাট, অব্যবস্থপনা। আপনি এসব দূর করার উদ্যোগ না নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। আমরা কথা না, কাজ দেখতে চাই। স্বাস্থ্য খাতে আর হরিলুট দেখতে চাই না। অব্যবস্থাপনা দেখতে চাই না। সাধারণ মানুষ যাতে সুচিকিৎসা পায় তার নিশ্চয়তা চাই। বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, দেশ পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করছে। তারপরও বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা। আমরা এখনও পর্যন্ত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারিনি। যারা সরকারি হাসপাতালে কর্মরত তারাই বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসা করছে। তিনি বলেন, এতগুলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, এর মধ্যে কতগুলো মানসম্মত? আজকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে যারা শিক্ষা অর্জন করছে তারা কজন বিসিএসে টিকছে? ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে এই ব্যাপারে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন? এদের ব্যাপারে সরকার বলেছিল এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। কিন্তু সিআইডি রিপোর্ট দিচ্ছে এখানে লাগাতার ৭ বছর অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। একই দলের ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, দেশ যায় কোন দিকে, মানুষের সমস্যা কি; মানুষ কোন বিষয় নিয়ে সাফার করছে আর আমরা আলোচনা করছি কী? অদ্ভুত লাগে। করোনাকালে অর্থনৈতিকভাবে কতগুলো পরিবার পঙ্গু হয়ে গেছে সেই খবর কি আমাদের কাছে আছে? করোনাকালে হাতেগোনা কিছু রিপোর্ট আসছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, করোনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকে প্রাণে হয়তো বেঁচে আছে। কিন্ত অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে। জমানো টাকা শেষ হওয়ার পর ঋণের জালে আটকা পড়েছে বহু মানুষ। করোনার আগে যেখানে মধ্যবিত্ত ছিল ৭০ শতাংশ এখন তা নেমে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্র মানুষ যেখানে ছিল ২০ শতাংশ সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। করোনাকাল বলে হয়তো এ ব্যাপারে মিডিয়ার কিছুটা মনোযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেলে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার ইতিহাস নতুন কিছু নয়। বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, করোনাকালে যে কয়টি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মানুষকে সর্বস্বান্ত করার অভিযোগ আসছে তার মধ্যে শীর্ষে আছে সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্যের হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ। সরকার ধীরে ধীরে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেসরকারি খাতে তার কর্মীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। চট্টগ্রামে সিআরবি নামে যে জায়গাটি আছে, সেটাকে চট্টগ্রামের অক্সিজেন বলা হয়। সেখানেও নাকি বেসরকারি হাসপাতাল হবে। এজন্য সেই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। রেলওয়ের জায়গা বলতে তো কিছু নেই সবই রাষ্ট্রীয় জায়গা, এই রাষ্ট্রীয় জায়গা বেসরকারি খাতে তুলে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা রাজনীতি করছেন। আমরা রাজনীতি করি, আমরা রাজনীতিবিদের জায়গায় থাকব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার জায়গায় থাকবে। ডাক্তাররা ডাক্তারদের জায়গায় থাকবে। এসব জায়গা রিপেয়ার করা দরকার। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, অ্যাডমিন ক্যাডারের লোক, জজ বা পুলিশ ক্যাডারের লোক তারা তো চাকরি করে; প্রাইভেট কোনো বিষয়ে কনসালটেন্সি করতে পারবেন না। ডাক্তাররা কেন বিসিএস অফিসার হয়ে ডিউটির পর প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবে। এটা করায় তাদের মূল কাজটা ঠিক থাকে না। এটা দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা। মন্ত্রীকে বলব যদি উপকার করতে চান তাহলে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসটা আপনারা দয়া করে বন্ধের চেষ্টা করেন। জনগণের পয়সা দিয়ে তাদের বেতন দেবেন, তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন; এটা হতে পারে না। ভর্তির জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কয়েক লাখ টাকা নেয় আনঅফিসিয়ালি, অন্যায়ভাবে এত টাকা নিচ্ছে। একই দলের পীর ফজলুর রহমান বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেই। টেকনোলজিস্টের ব্যাপক সংকট। ২০২০ সালের পরীক্ষার ফলাফল এখনও দেওয়া হয়নি। অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক এয়ারপোর্টে পিসিআর ল্যাব দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনার পরও প্রবাসীদের ঘেরাও করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কারোনা মহামারির পর দেখা গেছে দেশের স্বাস্থ্য খাতের কী ভয়াবহ দুরবস্থা। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ হবে। সেটা পর্যায়ক্রমে হবে। সেই অনুযায়ী ৩৮টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডাক্তারদের অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। স্বাচিপ, বিএমএ রয়েছে। রাজনীতি তো সবাই করতে পারে। প্রকৌশলী, আইনজীবীরা রাজনীতি করতে পারে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসকরা তাদের অ্যাসোসিয়েশন করলে তাতে কোনো দোষ বা অন্যায় দেখি না। তারা তো সেবা দিচ্ছেন। মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনায় সেবা দিয়েছে। সেখানকার চিকিৎসা ফি নির্ধারণে আমরা বৈঠক করছি। আশা করি সেটার সমাধান হবে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। আর বিমানবন্দর জায়গা দেবে। আমরা শুধু কারিগরি সহযোগিতা দেব। শুনেছি, দুই-একদিনের মধ্যে বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে। সমালোচনা আমাকে শক্তিশালী করে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সমালোচনা পছন্দ করি। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে যে সমালোচনা করেন আমি তা ইতিবাচক হিসাবে দেখি। সমালোচনা আমাকে শক্তিশালী করে। তবে সেই সমালোচনা অবশ্যই সঠিক হতে হবে। তিনি বলেন, ওনারা বেশ এনার্জি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। চালিয়ে যান, আমিও চালিয়ে যাব আপনাদের সঙ্গে। কাজেই কোনো অসুবিধা হবে না। আপনারা দোষত্রুটি খুঁজে পাবেনই। সমুদ্রের মধ্যে দুই বালতি ময়লা ফেললে সমুদ্র নষ্ট হয়ে যাবে না, পানি নষ্ট হয়ে যাবে না। বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে স্বাস্থ্য খাতে আমরা কী করেছি আর আপনারা কী করেছেন-এ বিষয়টি একটু তুলে ধরতে চাই জনগণের সামনে। এ সময় বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য খাতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আমরা জানি আপনারা কী বলতে পারেন। তাই আজকে প্রস্তুত হয়ে এসেছি। সারাদিন লাগবে। কমিউনিটি ক্লিনিক ১৪ হাজার ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ৩০ রকমের ওষুধ ফ্রি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। আপনারা এসে ওটাকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এটা হলো স্বাস্থ্যসেবায় আপনাদের ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী বিএনপির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সময় কী হয়েছে আমরা জানি। আপনাদের সময় দুর্নীতির কারণে মানুষ মারা গেছে, গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা তো উনয়ন করে পুরস্কার পেয়েছি। আর আপনারা পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আর কিছু বলতে চাই না। আপনাদের বিষয়ে বলতে গেলে আমার সময় শেষ হয়ে যাবে। আজকে সংসদ জমছে ভালো। আপনারা কথা বলবেন, আমরাও উত্তর দেব। পরে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বিএনপির সময় কি কোনো হাসপাতালে ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছিল? গত দশ বছরে যে হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে, তার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোনো ব্যবস্থা আছে? তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। টানা ১৩ বছর আপনারা ক্ষমতায় আছেন। দেশের গণতন্ত্রের সূচক কোথায় আছে? প্রতিদিন গণমাধ্যমে এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে দুর্নীতির খবর প্রকাশ হচ্ছে না। এগুলো পড়েন। গত ১২ বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে এই বিষয়গুলো অহেতুক দোষারোপ না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের যে সংকট চলছে, সেখান থেকে আমরা কীভাবে বেরিয়ে আসব, মানুষের ভোটাধিকার কীভাবে নিশ্চিত করব, আসুন এসব নিয়ে আলোচনা করি। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির হারুন সাহেব বলেছেন ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছে। কিন্তু এটা কোথায় হয়েছে আমার জানা নেই। এটা কেনা হয়নি। ভুল তথ্য দিলে জনগণ ভুল বুঝে, এটা সঠিক না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০ হাজার ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি রয়েছে। এটা ব্যবহার হলে একটা সময় পরে তা নষ্ট হয়ে যায়। একটা সময় এটা ঠিক করতে হয়। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তা আমরা করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আপনারা টিকার কথা বলেছেন তিন হাজার টাকা। আপনাকে তো আগে জানতে হবে, তারপর বলতে হবে। অর্ধেক নয়, আপনাকে পুরো বিষয় নিয়েই বলতে হবে। যখন টিকা দেওয়া হয়, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে দেওয়া হয়। এটার সঙ্গে জনবল, সংরক্ষণাগার জড়িত রয়েছে। এখানে শুধু টিকার দাম তিন হাজার টাকা না। দ্রুত দেশে করোনা ভ্যাকসিন তৈরি হবে : বাংলাদেশে অতি দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হবে-এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার আছে বলেও জানান তিনি। অধিবেশনে বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু ভ্যাকসিন আনছি না; প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অতি দ্রুত দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। দেড় কোটি মানুষকে ডাবল ডোজ টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। চীন থেকে ৬ কোটি ডোজ টিকার নিশ্চয়তা পাওয়ার পর দেখলাম এই টিকা আনতে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা দরকার। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন টাকা যত লাগুক টিকা আনতে হবে। আমরা কোভ্যাক্স থেকে ৫ কোটি টিকা পাব। সব মিলিয়ে ১৬ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার আছে। ভ্যাকসিন গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে উন্নতি হয়েছে; হাসপাতালের সার্ভিস ক্ষমতার যে উন্নতি হয়েছে, সেটা করোনার সময় বোঝা গেছে। কেউ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যায়নি, যেতে পারেননি। দেশেই মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কোভিড, নন-কোভিড, ডেঙ্গু সব চিকিৎসায় দেশে হয়েছে। আমরা ১২০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করেছি। করোনার চিকিৎসা ভালো হয়েছে বলেই আজ মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫-এ নেমেছে। যেখানে আমেরিকায় এখন দেড় হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে। ভারতেও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালকে ইনস্টিটিউট করতে বিল পাশ : দক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে এবং গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে ঢাকা শিশু হাসপাতালকে ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করতে জাতীয় সংসদে বিল পাশ হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিল-২০২১’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। বিলে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার পর ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ এই আইনের অধীনে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে গণ্য হবে। ইনস্টিটিউটটি স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থেকে বিশেষায়িত শিশু চিকিৎসার ওপর স্নাতকোত্তর বা স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ও মেডিকেল টেকনোলজির বিষয়ে স্নাতক ও ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করতে পারবে। এছাড়াও কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করতে পারবে।
Link copied!