বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগে গত বছর ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন জামালপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। দলীয় পদ হারানোর পাশাপাশি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগেও বাধ্য হন তিনি। বিতর্ক এড়াতে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টাও বিফলে যায়। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক কার্যক্রমেও দেখা যায়নি তাকে। তবে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন মুরাদ। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যুক্ত করছেন নিজেকে।
সরিষাবাড়ীর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দীর্ঘদিন জনসমাগম এড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান। নানা বিতর্কের পর অনুসারীদের একটা অংশ তাকে ছেড়েছেন। তবে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সম্প্রতি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানেও সরব হয়েছেন ডা. মুরাদ। বাড়াচ্ছেন জনসংযোগ কার্যক্রম। তবে মুরাদের দীর্ঘদিনের বিরতির সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তার দলীয় ও বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। পরবর্তী নির্বাচন কেন্দ্র করে এরই মধ্যে আসনটিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন প্রায় এক ডজন প্রার্থী।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামালপুর-৪ আসনে অন্তত অর্ধডজন প্রার্থী এরই মধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়তে বর্তমান সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানসহ সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছানোয়ার হোসেন বাদশা, সাবেক সহসভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, সাবেক সহসভাপতি প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. এনামুল হক খান মাঠে নেমেছেন।
জামালপুর-৪ আসনটিতে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. মুরাদ। ২০১৪ সালে মনোনয়ন পাননি। ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য হন এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালের মে মাসে তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত বছর নভেম্বরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন ডা. মুরাদ। এ বিতর্ক-সমালোচনার মধ্যেই এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে তার একটি বিতর্কিত ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে নিজের দলসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকেও পদত্যাগে বাধ্য হন। একদিন পর ৯ ডিসেম্বর রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন মুরাদ। কিন্তু কানাডায় ঢুকতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই চলতি বছরের শুরুতে স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে মুরাদের বিরুদ্ধে গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন তার স্ত্রী চিকিৎসক জাহানারা এহসান। এসব ঘটনার পর পরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন পর এলেন প্রকাশ্যে।
জামালপুর-৪ সংসদীয় এলাকার লোকজন বর্তমান এমপির কর্মকাণ্ডে ত্যক্ত-বিরক্ত বলে মনে করেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং ঢাকার তেজগাঁও আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, সরিষাবাড়ীর সাধারণ মানুষ বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তার কর্মকাণ্ডের ওপর খুবই ত্যক্ত-বিরক্ত। এটাই বাস্তবতা। তার জনভিত বলতে যেটা বোঝায় অর্থাৎ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে তিনি নেই। কোনো সমীকরণেই নেই। শুধু দম্ভোক্তি, মারামারি এগুলোতেই আছেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, আসনটিতে আমাদের প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ। তিনি আওয়ামী লীগের একজন পোড় খাওয়া নেতা। নেত্রী মনোনয়ন দিলে এ আসন থেকে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা যাবে।
তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. মুরাদ হাসান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এখানে সব দল-মতের মানুষ রয়েছে, তবে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। এ বেশি ভোট ধরে রাখার জন্য যোগ্য প্রার্থী প্রয়োজন। ভোট অবাধ হলে আমাকে ছাড়া দলের অন্য কোনো প্রার্থী বিজয় নিশ্চিত করবে—এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে এখানে বাস্তবতাটা হলো, আওয়ামী লীগের জেতার মতো প্রার্থী হলো একমাত্র মুরাদ।
ইমেজ সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইমেজ সংকট...এটা ঠিক আছে। তবে ভোটযুদ্ধে গেলে বোঝা যাবে কার ইমেজ সংকটে আছে। সেটা জনগণই বুঝিয়ে দেবে।
সূত্র: বণিক বার্তা