শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের মাঠে/ কুষ্টিয়া-২: ইনুর বাধা আ.লীগ নেতারা

প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, মার্চ ২৬, ২০২৩

ভোটের মাঠে/ কুষ্টিয়া-২: ইনুর বাধা আ.লীগ নেতারা

জোটের স্বার্থে ২০০৮ সালের নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনটি জাসদকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হন হাসানুল হক ইনু। পরের দুই নির্বাচনেও তিনিই হন এমপি। কিন্তু এবার ইনুর বাধা হতে পারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির চলমান বিবাদ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা চাইছেন দলীয় কারও মনোনয়ন। অন্যদিকে একসময়কার নিজেদের শক্ত ঘাঁটি ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি। কিন্তু দলটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। ক্ষমতাসীন জোটের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি কুষ্টিয়া-২ নির্বাচনী এলাকায়। প্রভাবশালী দুই নেতার সমর্থকদের দ্বন্দ্ব-বিবাদে মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই এলাকার রাজনীতি। দ্বন্দ্ব-কোন্দলের জেরে উভয় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে হাসানুল হক ইনুর পাশাপাশি আরও কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন পেতে এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক দুই অধ্যক্ষ ইফতেখার মাহমুদ এবং কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটি ও বিএমএ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি এস এম মুসতানজীদ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লিংকন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী এবং ফরিদা ইয়াসমিন। নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও মাঠে শোনা যাচ্ছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরের নাম। জোট ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনে এই আসনে হাসানুল হক ইনুর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জাসদের বিরোধ ইনুর মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। বিরোধের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ, তারা এর আগেও আমার জন্য কাজ করেছেন। আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এবারও করবেন।’ তবে ইনুর জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। জাতীয় দুই নেতার ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় রাজনীতিতে। দীর্ঘদিনের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা বর্তমানে প্রকাশ্য সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। গত কয়েক বছরে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। হামলা ও মামলা হয়েছে ডজনের বেশি। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জাসদ গণবাহিনীর হাতে তাঁদের বহু নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে ‘বিএনপির সন্ত্রাসীরা’ জাসদে যোগদান করে আবারও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের রক্ত ঝরাচ্ছে। তাই দলের নেতা-কর্মীরা এবার জাসদকে কোনো ছাড় দিতে নারাজ। জোরেশোরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ কামারুল আরেফিন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে তিনি জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে কামারুল আরেফিন বলেন, ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে জেতার পর ইনু সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চিনতেই চান না। এবার তাঁর নির্বাচনের মাঠে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামানো যাবে না। তাই এবার আমি নিজেই মনোনয়ন চাইব।’ মাঠে শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও এখানে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে তাদের দলীয় কোন্দল। বর্তমানে এই দুই উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্পষ্ট তিন ভাগে বিভক্ত। শহীদুল ইসলামের অনুসারী এবং রাগিব রউফ চৌধুরীর অনুসারীরা বসেন আলাদা কার্যালয়ে। আরেকটি পক্ষে আছেন ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বড় দলে প্রতিযোগিতা থাকে, বিএনপিতেও আছে। আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। যেটা আছে, সেটা মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা।’
Link copied!