শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যরাতে শাকিবের হোটেল কক্ষে ঐ নারী কী করছিলেন, প্রশ্ন বুবলীর

প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, মার্চ ২১, ২০২৩

মধ্যরাতে শাকিবের হোটেল কক্ষে ঐ নারী কী করছিলেন, প্রশ্ন বুবলীর

অস্ট্রেলিয়ায় শুটিং করতে গিয়ে ধর্ষণকারী হিসেবে দেশটির পুলিশের নথিতে উঠে এসেছে ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের নাম। সে দেশের পুলিশের একটি প্রতিবেদনের কপি ইতোমধ্যে হাতে এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে। সেখানে দেখা গেছে, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত শাকিব খান ওরফে রানা। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট জর্জ পুলিশ স্টেশনে ধর্ষণের অভিযোগে শাকিব খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী অ্যানি সাবরিন নিজেই। মামলার সাক্ষী হয়েছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ম্যাথিউ জন ক্রুকসন। পুলিশ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নভোটেল দ্য গ্র্যান্ড প্যারেড অ্যাপার্টমেন্ট ৭২১ ব্রাইটন লা স্যান্ডস হোটেল কক্ষে রাত ২টা থেকে ৪ পর্যন্ত ওই নারী প্রযোজককে ধর্ষণ করেন শাকিব খান। এমন প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর শাকিব খানের অন্যতম নায়িকা ও স্ত্রী শবনম বুবলী প্রশ্ন তুলেছেন এই বলে, ‘মধ্যরাতে তার (শাকিব খান) হোটেল রুমে নারী সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে বলা হচ্ছে। মধ্যরাতে তার হোটেল কক্ষে সেই নারী কী করছিলেন? কী তার বা তাদের উদ্দেশ্য ছিল?’ বুবলী ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘শাকিব খান একজন অভিনয়শিল্পী। যে কিনা প্রায় ২৪ বছর এই বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করেছেন, অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, সিনেমা নিয়ে ভেবেছেন। হঠাৎ করে বিভিন্ন ধরনের ইস্যু এনে তাকে নিয়ে নানান বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে!’ বুবলীর মতে, ‘‘শুটিং চলাকালীন এত এত অভিযোগ যখন টের পেয়েছিল ওনারা, তাহলে কেন তখন তাকে বাদ দেওয়া হলো না? সমিতিগুলোতে অভিযোগ করা হলো না? দুপক্ষের কথা শোনা হলো না? ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ শুটিংয়ের পর ২০১৮ সালে শাকিব খান তার ‘সুপার হিরো’ নামের আরেকটি সিনেমার শুটিং সম্মানের সাথে প্রায় ২০ দিনে অস্ট্রেলিয়া থেকে শেষ করে আসেন। উনি যদি কোনও ব্যাপারে গিল্টি থাকতেন তাহলে তো অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তাকে তখন শুটিংয়ের অনুমতিই দিতো না, শাকিব খান নিজেও অস্ট্রেলিয়া যেতেন না।’’ গভীর রাতে শাকিব খানের হোটেল কক্ষে উক্ত নারী কী করছিলেন- এমন প্রশ্ন তুলে বুবলী জানতে চান, ‘এত বছর কেন ওসব ঘটনা নিয়ে সেই নারী প্রকাশ্যে কথা বললেন না! এখন কেন এই প্রডিউসার দাবি করা ব্যক্তি অস্থির হয়ে গেলেন? আর দেশে হোক বা বিদেশে! যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারে, খাতায় নাম উঠতেই পারে। কিন্তু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, উভয় পক্ষের প্রমাণাদি নিয়ে। কথা হলো, হঠাৎ এত অভিযোগের ভাণ্ডার খোলা হলো কেন?’ বুবলী মনে করেন, এখনও যদি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সংশ্লিষ্টরা শাকিব খানের কাছে শিডিউল চায়, সিনেমার কাজ শেষ করতে চায়, তবে সেটি তিনি দেবেন। তার ভাষায়, ‘এখনও যদি শিডিউল চাওয়া হয় সিনেমা শেষ করতে, উনি (শাকিব খান) অবশ্যই শিডিউল দেবেন। কারণ, সে পেশাগত জায়গায় যথেষ্ট ডেডিকেটেড, তা না হলে ২৪ বছর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারতেন না। একজন সফল শিল্পী একদিনে তৈরি হয় না।’ এই নায়িকা মনে করেন, ‘কয়েক বছর ধরে দেখছি, একটা চক্র কিছু দিন পর পরই শাকিব খানকে নিয়ে উঠেপড়ে লাগে। নানা চক্রান্তে মেতে ওঠে। বিষয়টা যেন এমন, তাকে হটিয়ে দিতে পারলেই আমরা রাজা। কিন্তু তার লাখো কোটি ভক্তরা কখনোই তা হতে দেয়নি। দিবেও না। সবসময়ই তারা তাকে আগলে রাখে। শক্তি দিয়ে এগিয়ে নেয়। জাস্ট রিমেম্বার, ওয়ান্স কিং অলওয়েজ কিং!’ এর আগে গেলো ১৫ মার্চ ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর অন্যতম প্রযোজক রহমত উল্লাহ লিখিত আকারে শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ গুরুতর অভিযোগ জমা দেন প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে। এরপর বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টায় পরদিন ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় বসেন শাকিব খান ও রহমত উল্লাহ। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসও। কিন্তু সেখানে কোনও সমঝোতা হয়নি। এরপর ১৮ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। সেদিন রাতে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গুলশান থানায় যান শাকিব খান। প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বসে থেকে তিনি মামলা না করেই ফিরে আসেন। এরপর ১৯ মার্চ তিনি ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে মামলা করেছেন বলে জানা গেছে। সে সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শাকিব দাবি করেন, ওই প্রযোজক ভুয়া, মিথ্যাবাদী। তিনি তার নামে মিথ্যাচার করে পালিয়ে গেছেন। অনুসন্ধানে মিলেছে, ভুয়া নন, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির একজন সদস্য রহমত উল্লাহ। এদিকে শাকিব খানের ‘ভুয়া প্রযোজক’ ও ‘পালিয়ে যাওয়া’ মন্তব্যের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া থেকে রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমি পালিয়ে আসিনি। কাজের টানেই অস্ট্রেলিয়া এসেছি। কারও ভয়ে পালিয়ে আসিনি। আমি আবার আসবো। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো সব প্রমাণ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’র শুটিং সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় শাকিব খানের সঙ্গে অ্যানি সাবরিনের প্রথম দেখা হয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া শাকিব খানের নিয়মিত ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, খাওয়া-দাওয়া ও যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করতেন অ্যানি। মূলত সেই সূত্রেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Link copied!