শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাথাপিছু আয় বাড়বে ২৩৩ ডলার

প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, মে ১১, ২০২২

মাথাপিছু আয় বাড়বে ২৩৩ ডলার

ডেইলি খবর ডেস্ক: দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.২৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বাড়বে ২৩৩ ডলার।জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবের ভিত্তিতে মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে সরকার।চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৩৩ মার্কিন ডলার বেড়ে উন্নীত হবে ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে।বৈশ্বিক মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে উঠে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭.২৫% প্রবৃদ্ধি হবে বলে গত মঙ্গলবার (১০ মে) জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় মন্ত্রী জানান, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের উপাত্ত নিয়ে বিবিএস এ সাময়িক হিসাব করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের এ হারের ভিত্তিতে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে সরকার। তবে প্রবৃদ্ধির এ হিসাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। আর মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধির সুবাদে দারিদ্র্য হার কতটা কমছে এনিয়েও তারা সন্দিহান।গত মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রবৃদ্ধির হার-সহ বিবিএস প্রতিবেদনে উল্লেখিত সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে অবশিষ্ট তিন মাসের তথ্য নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির সময় প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সরকার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭.২ শতাংশ। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলমও ্রপ্রবৃদ্ধির বিচারে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে অনুকূল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, "খুব ভালোভাবে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, যার প্রমাণ হচ্ছে চলতি অর্থবছরের বাড়তি প্রবৃদ্ধি। প্রবৃদ্ধির অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা এখনো কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় যেতে না পারলেও তাতে পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছি।"সরকারি তথ্যানুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৯৪ শতাংশ। মহামারির কড়াল অভিঘাতে তার আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাত্র ৩.৪৫ শতাংশে নেমে আসে প্রবৃদ্ধি। শামসুল আলম বলেন, কোভিড মোকাবিলায় যেসব দেশ ভালো করছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকে। ইন্টারন্যাশনাল কোভিড রিকভারি ইনডেক্স অনুযায়ী, ১২১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।"বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (গেøাবাল হাঙ্গার ইনডেক্স) এবং মানব উন্নয়ন সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স অর্জনেও দেশের অবস্থান ভালো।"আমাদের আমদানি- রপ্তানি দুইই বাড়ছে। আমদানি বৃদ্ধি শিল্পায়নের জন্য ইতিবাচক,যা শেষপর্যন্ত আমাদের প্রবৃদ্ধির সহায়ক হবে।"রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি কিছুটা সমস্যায় পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন,বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি (চড়া মূল্যস্ফীতি) থাকায় অর্থ ব্যয়ে সতর্কভাবে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে শেষে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২৩৩ ডলার বেড়ে ২,৮২৪ ডলার হবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা। তবে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডের সময়ে বাংলাদেশের ৩৫-৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২,৫৯১ ডলার বা ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা। এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী ড. আলম বলেন, "জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে আমাদের বৈষম্য রয়েছে, এ ব্যবধান থাকবেই। গড় দিয়ে মাথাপিছু আয় হিসাব করা হয়। অর্থনীতিতে এর কোনো বিকল্প নেই।"বৈষম্য থাকবে । উন্নয়নের একটি পর্যায় পর্যন্ত বৈষম্য থেকে যাবে। বৈষম্য সব সময় খারাপ নয়।"উল্লেখ্য, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তিক একক আয় নয়। রেমিট্যান্সসহ দেশের অভ্যন্তরীণ যত আয় হয়, তা জাতীয় আয়। আর জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে মাথাপিছু জাতীয় আয় হিসাব করা হয়। প্রবৃদ্ধির গোলকধাঁধা-সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রবৃদ্ধির এই হারকে 'সন্দেহজনকভাবে বেশি' বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, য পদ্ধতি ও যেসব তথ্যের ভিত্তিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করা হয়েছে আমি সেগুলো সম্পূর্ণরুপে প্রকাশের দাবি করছি। এই সন্দেহজনকভাবে উচ্চ জিডিপি বৃদ্ধির অনুমান পারস্পরিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য প্রক্সি সূচক দ্বারা সমর্থিত নয়।বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা পেতে চাইছে, কিন্তু সন্দেহজনক হিসাবের ফলে দেশের পরিসংখ্যানগত এবং নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনিতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, জাতীয় বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক প্রবৃদ্ধির হিসাব তার কাছাকাছি।তিনি প্রশ্ন রাখেন, "আমরা যদি জিডিপির এত নির্ভুল প্রক্ষেপণই করতে পারি; তাহলে এডিপি, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বা ব্যাংক ঋণের পরিস্থিতিতে কেন বাস্তবতার সাথে মিল নেই?"এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেছেন, দেশের অনেক মধ্যবিত্ত মানুষই এখন সরকারি ভর্তুকির নিত্যপণ্য কিনতে ছুটছেন। অন্যদিকে, সরকারি তথ্য বলছে তাদের আয় নাকি বাড়ছে। পোশাক রপ্তানিকারকেরাও বলছেন, রপ্তানি বাড়লেও তাদের আয় সে তুলনায় বাড়েনি। "তাহলে এই মাথাপিছু আয় কে পেল? মজুরি বা বেতন বৃদ্ধির সাথেও আয়ের তথ্য মেলে না"-উল্লেখ করেন ড.জাহিদ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক না হওয়ায় বৈষম্য বাড়ছে।"তাছাড়া, আমাদের কাছে সঠিক তথ্য না থাকায় আমরা অসমতার সঠিক চিত্র পাচ্ছি না। কোভিডের সময়, অনেক লোক আয় হ্রাস এবং চাকরি হারানোর পরে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছিল। মাথাপিছু আয় সবসময় মানুষের সঠিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে প্রতিফলিত করে না"- যোগ করেন তিনি।কৃষিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে, বেড়েছে উৎপাদন শিল্প এদিকে বিবিএসের সাময়িক হিসাবে, চলতি মূল্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে কৃষিতে ২.২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে বিবিএস। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩.১৭ শতাংশ। এবং ৩.৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে।পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাচ্ছে, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা করে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হবে ১০.৪৪ শতাংশ। এর আগের ২০২০-২১ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ১০.২৯ এবং ৩.৬১ শতাংশ।উৎপাদন বা প্রস্তুত প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ১২.৩১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১১.৫৯ শতাংশ।চলতি অর্থবছরে বৃহৎ শিল্প ১২.৮৭, ছোট, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প ১১.৭১ এবং কুটির শিল্পে ১১.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।শিল্প খাতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি থাকা সত্বেও জ্বালানি খরচ ভিন্ন চিত্র দেখায়। গত অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি কমেছে। বিদ্যুত খরচ বৃদ্ধি ১১.৬৫ শতাংশ থেকে ৭.২৪ শতাংশে নেমেছে। গ্যাসের ক্ষেত্রে ১.৪৫ থেকে ০.৫২ শতাংশ হয়েছে।সাময়িক হিসাবে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬.৩১ শতাংশ হবে বলে উল্লেখ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৭৩ শতাংশ।বিবিএস বলছে, অর্থবছর শেষে জিডিপির আকার (চলতি মূল্যে) বেড়ে হবে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিজিপির আকার ছিল ৪১৬ বিলিয়ন ডলার।ব্যুরোর হিসাব অনুসারে, বিনিয়োগ জিডিপি অনুপাত আগের ৩১.০২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩১.৬৮ শতাংশ হয়েছে।এদিকে সরকারি সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরে বাড়লেও বেসরকারি বিনিয়োগ এখনও প্রাক-মহামারি সময়ের চেয়ে নিচে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ২৪.০৬ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে, যা ২০১৯ অর্থবছরে ছিল ২৫.২৫ এবং ২০২১ অর্থবছরে এ হার ছিল ২৩.৭০ শতাংশ।সুত্র-টিবিসি  
Link copied!