শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে ফোনে ঢুকে তথ্য চুরি করে ‘পেগাসাস’

প্রকাশিত: ০৮:২৮ এএম, জুলাই ২০, ২০২১

যেভাবে ফোনে ঢুকে তথ্য চুরি করে ‘পেগাসাস’

ইসরাইলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’। এটি ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানসহ ১৭টি সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে আসে। অনুসন্ধানকারীদের হাতে ৫০ হাজারেরও বেশি ফোন নম্বর এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এসব নম্বরে আড়িপাতা হয়েছে। এসব ভুক্তভোগীর তালিকায় রয়েছেন অন্তত ১৮০ জন প্রভাবশালী সাংবাদিক। রোববার এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান বলেছে, এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও রাজনীতিকদের ওপর আড়িপাতা হয়েছে। মূলত বিভিন্ন দেশের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো আড়িপাতার কাজে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলভিত্তিক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘এনএসও গ্রুপ’ আলোচিত স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’-এর উদ্ভাবক। বর্তমান বিশ্বে অত্যাধুনিক স্পাইওয়্যার সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে পেগাসাসকে সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করা হয়। কোনো ফোন থেকে তথ্য ফাঁসের জন্য প্রথমে একটি ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করা হয়। তখন ওই নম্বরে একটি ক্ষতিকর কোড চলে গিয়ে স্পাইওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যায়। কেউ ফোন রিসিভ না করলেও সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। এরপর আক্রমণকারী ফোনের পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এটা এতটাই ভয়ংকর যে, একবার স্পাইওয়্যারটি ইনস্টল হয়ে গেলে সহজেই যে কারও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং, ভয়েস কল, পাসওয়ার্ড, কন্টাক্ট তালিকা, বিভিন্ন ইভেন্টের ক্যালেন্ডার, ফোনের মাইক্রোফোন, এমনকি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে চলে যায়। ফোনে যত মেসেজ আসুক বা পাঠানো হোক, পেগাসাস তা কপি করে পাঠিয়ে দিতে পারে নির্দিষ্ট জায়গায়। ফোনে থাকা ছবির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। এই সফটওয়্যার ফোনকল রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে আপনার ভিডিও ধারণ করতে পারে। আপনি হয়তো হাতের কাছে ফোন রেখে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। পেগাসাস আপনার ফোনের মাইক্রোফোনকে জাগিয়ে তুলে আপনার অজান্তেই সেই আলাপ রেকর্ড করে ফেলতে পারে। আপনি কোথায় আছেন, কিংবা কোথায় গিয়েছিলেন, কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, সেসব বিষয়ও পেগাসাস চিহ্নিত করার ক্ষমতা রাখে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপলের আইমেসেজ সফটওয়্যারের ত্রুটি ব্যবহার করে স্পাইওয়্যার পাঠানো শুরু করে এনএসও। অ্যাপল বলছে, এ ধরনের হ্যাকিং ঠেকাতে তারা সব সময় তাদের সফটওয়্যার আপডেট করে যাচ্ছে। কারিগরিভাবে পেগাসাস কীভাবে করে কাজ করে, কোনো ফোনে আক্রমণ করার পর সেখানে কী ধরনের চিহ্ন থেকে যায়, তা বোঝার জন্য কাজ করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্লিনভিত্তিক সিকিউরিটি ল্যাবের গবেষক ক্লডিও গুয়ারনিয়েরি। তিনি বলেন, যার ফোন আক্রান্ত হলো, তার পক্ষে সেটা বোঝা খুবই কঠিন। সাধারণত ফোন কেনার সময় থাকে এ রকম কোনো সফটওয়্যার, যেমন আইমেসেজ অথবা খুব জনপ্রিয় কোনো সফটওয়্যার যেমন হোয়াটসঅ্যাপ- এসব সফটওয়্যারের কোডিংয়ের ত্রুটি খুঁজে বের করে এনএসওর মতো কোম্পানিগুলো। কারণ তাতে একসঙ্গে বহু ফোনে স্পাইওয়্যার ছড়ানোর সুযোগ মিলে যায়। গার্ডিয়ান বলছে, বিশ্বজুড়ে যে ১৮০ সাংবাদিকের স্মার্টফোনে আড়িপাতা হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছেন সম্পাদক, অনুসন্ধানী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা। আছেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, আলজাজিরা, ফ্রান্স ২৪, রেডিও ফ্রি ইউরোপ, মিডিয়াপার্ট, অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি), ব্লুমবার্গ, এএফপি, ইকোনমিস্ট, রয়টার্স, ভয়েস অব আমেরিকাসহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার আগে ও পরে তার ঘনিষ্ঠজনদের মুঠোফোনেও আড়িপাতা হয়েছিল। ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, আড়িপাতা হয় খাসোগির স্ত্রী হানান এলাতার ও তার বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিসের ফোনে। খাসোগি হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ দুই তুর্কি কর্মকর্তার ফোনেও এভাবে আড়িপাতা হয়। এনডিটিভি জানিয়েছে, এই হ্যাকিংয়ের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় ভারতের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, বিজ্ঞানীর নাম থাকার কথা জানিয়েছে দেশটির নিউজ ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যার। তবে ভারত সরকার এই আড়িপাতায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
Link copied!