শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যে ১১ নেতা আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন

প্রকাশিত: ০৯:২৩ এএম, জুন ১২, ২০২১

যে ১১ নেতা আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন

ওয়ান-ইলেভেন ছিল বিরাজনীতিকরণের এক প্রক্রিয়া। সেনাসমর্থিত ডক্টর ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শাসন করতে চেয়েছিল। আর এই ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পেছনে দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তারা চেয়েছিল রাজনীতিমুক্ত একটি সরকার গঠন করতে, রাজনীতিবিদদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে। আর এই জন্যই রাজনীতিকে বিভক্ত করার এক কূট কৌশলে নেমেছিল ওয়ান-ইলেভেন সরকার। আর এই কৌশলে আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধিতা করেছিলেন। তারা সংস্কারের দাবি করেছিলেন। সেই সময়কার পত্র পত্রিকা এবং এ নিয়ে গবেষণা গ্রন্থগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের জন্য। আর সেই সমস্ত নেতাদেরকে এখনো আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থী নেতা বলা হয়। শুধু আওয়ামী লীগ নয় বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলেই এরকম বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল। তার তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টাটি ফলপ্রসূ হয়নি। আর যারা সেসময় এই সংস্কার করেছিল, বিরাজনীতি প্রক্রিয়াকে বুঝে না বুঝে সহযোগিতা করেছিল তাদের মধ্যে রয়েছেন: ১. আমির হোসেন আমু: আমির হোসেন আমু ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সংস্কার প্রস্তাবে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির ক্ষমতা খর্ব করা, দুই মেয়াদের বেশি সভাপতি না থাকাসহ বিভিন্ন রকম প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং সেই সময় তাঁর স্ত্রী অসুস্থ থাকার পরও তিনি দেশে এসে এই সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে সকলকে বিস্মিত করেন। ২. তোফায়েল আহমেদ: তোফায়েল আহমেদ ছিলেন আরেক সংস্কার প্রস্তাব দানকারী। প্রায় আমির হোসেন আমুর অনুকরণেই এই সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। যে কারণেই হোক এই সংস্কার প্রস্তাব ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতিকে মাইনাস করার পক্ষে। পরবর্তীতে তোফায়েল আহমেদ নিজেই স্বীকার করেছেন যে, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে তিনি এই সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। ৩. প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক: প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা বিরোধী ছিলেন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাকশাল গঠন করেছিলেন। পরে আবার আওয়ামী লীগের ফিরে এসেছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। বিকল্প নেতৃত্বের বিকাশের জন্য সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ৪. প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত: প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও চার সংস্কার প্রস্তাব প্রদানকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের অন্যতম শিষ্য ছিলেন। তিনি এই সংস্কার প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলেন। যা অন্য তিন নেতার প্রায় অনুরূপ। ৫. সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ: সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শুধু সংস্কারপন্থী ছিলেন না, তিনি গোপনে সেনা সমর্থিত সরকারের বিরাজনীতির প্রক্রিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন এবং তাদেরকে সহযোগিতা করেছিলেন। মইন উ আহমেদ যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন বলেও বিভিন্ন মহল মনে করেন। ৬. মাহমুদুর রহমান মান্না: মাহমুদুর রহমান মান্না সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের মতো শেখ হাসিনা বিরোধী অবস্থানে চলে যান এবং ওয়ান-ইলেভেন সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী হিসেবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিলেন। ৭. অধ্যাপক আবু সাইয়িদ: অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থীদের তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে আবির্ভূত হন এবং তার বাড়িতেই সংস্কারপন্থীরা বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিত হতেন বলে জানা যায়। ৮. মুকুল বোস: মুকুল বোস ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি সংস্কারপন্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছিলেন। মুকুল বোস আওয়ামী লীগকে ভাঙনের মুখে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ৯. আ খ ম জাহাঙ্গীর: আ খ ম জাহাঙ্গীর ছিলেন নীরব সংস্কারপন্থী। তিনি শুধু অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এবং মুকুল বোসের কারণে সংস্কারপন্থী হয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। ১০. সাঈদ খোকন: সাঈদ খোকন শুধু সংস্কারপন্থী ছিলেন না। তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে সেনাসমর্থিত সরকারের কিংস পার্টিতেও যোগদান করেছিলেন। যদিও তিনি পরবর্তীতে সেখান থেকে ফিরে আসেন। ১১. আখতারুজ্জামান: ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামানও ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী ছিলেন এবং সেই সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে তিনি রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে মান্না এবং সুলতান মনসুরের সঙ্গে কাজ করেছিলেন বলেও জানা যায়। তবে এই সংস্কারপন্থীরা শেষপর্যন্ত সফল হননি। তারা কোণঠাসা হয়েছেন এবং এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতিতে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
Link copied!