বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

রুপালী ব্যাংকের ঋণের অপব্যবহারকারি এমডি আতাউর এখন সোনালী ব্যাংকে

প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, নভেম্বর ১৩, ২০২১

রুপালী ব্যাংকের ঋণের অপব্যবহারকারি এমডি আতাউর এখন সোনালী ব্যাংকে

ডেইলি খবর ডেস্ক: রুপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি আতাউর রহমান প্রধান ঋণ প্রদানের ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতশত কোটি টাকা ডলি কনস্ট্রাকশনকে ঋণ দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কি স্বার্থে!নগদ কমিশন না অন্য কিছু? সৎ ব্যাংকার সেজে কমিশন হাতানোর অভিযোগে ব্যাংক পাড়ায় বলাবলি হচ্ছে নানারকম মুখরোচক গল্প। তবে এখন তিনি সোনালী ব্যাংকের এমডি। এরআগে রুপালী ব্যাংকের এমডি থাকাকালে আতাউর রহমান প্রধান পর্ষদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই গ্যারান্টিকে সরাসরি ঋণে রূপান্তরের অনুমোদন দিয়েছেন। যা ঋণে ক্ষমতার অপব্যবহার। ঘটনার বিবরনে জানা গেছে-রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) থাকাকালে আতাউর রহমান প্রধান ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডলি কনস্ট্রাকশনকে ঋণসুবিধা দিয়েছেন। তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই গ্যারান্টিকে (ননফান্ডেড) সরাসরি ঋণে (ফান্ডেড) রূপান্তরের অনুমোদন দেন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিএফআইইউ মনে করে,ডলি কনস্ট্রাকশনকে এভাবে ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আতাউর রহমান প্রধান বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের এমডি। তিনি বলেন,‘ডলি কনস্ট্রাকশন সরকারি কাজনির্ভর প্রতিষ্ঠান। আমার মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন ভালো ছিল। একবার জরুরি প্রয়োজনে ননফান্ডেড ঋণকে ফান্ডেডে রূপান্তর করার অনুমতি দিয়েছিলাম। পরের পর্ষদে তা অনুমোদন হয়,কেন্দ্রীয় ব্যাংকও অনাপত্তি দেয়। কিছুদিনের মধ্যে ওই টাকা পরিশোধ হয়ে যায়। এখন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বুঝতে পারছি না।’ জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১০৫৬তম সভায় বড় ঋণের গ্রাহক ডলি কনস্ট্রাকশনের ৩৫০ কোটি টাকার ফান্ডেড ঋণসীমা ও ১২৫ কোটি টাকার ননফান্ডেড ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর এই ঋণসীমা অনুমোদন দেয়। কিন্তু আতাউর রহমান প্রধান রূপালী ব্যাংকের এমডি থাকাকালে ২০১৯ সালে গ্যারান্টি বা ননফান্ডেড ঋণসীমা থেকে ৫০ কোটি টাকা ফান্ডেড তথা সরাসরি ঋণে রূপান্তরের অনুমোদন দেন। তিনি ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি ২৫ কোটি টাকা ও ১৯ মার্চ ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেন। কিন্তু বিষয়টি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপন করেননি,কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও অনাপত্তি নেননি।রূপালীর চেয়ারম্যানকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে,‘পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি না নিয়ে আপনাদের ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এই বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ডের মাধ্যমে এমডি রূপালী ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করেছেন।এ নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে রূপালী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে,‘৫০ কোটি টাকার ঋণ ফান্ডেড হওয়ার পর একই হিসাবে ১৫১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে ব্যাংকিং নিয়মে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০ কোটি টাকা সমন্বয় হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু আলাদাভাবে হিসাব না খোলায় এবং সমন্বিতভাবে হিসাব পরিচালনা করায় সুদসহ আদায় হিসাবায়ন ও উপস্থাপনে পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়েছে।’ জানা গেছে, ডলি কনস্ট্রাকশন মূলত নির্মাণ ও খনন খাতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এটি সড়ক ও সেতু নির্মাণ করে। আবার নদী খনন ও নদী রক্ষা বাঁধের কাজও করে থাকে। মূলত সরকারি বিভিন্ন কাজের সঙ্গেই প্রতিষ্ঠানটি যুক্ত। ডলি কনস্ট্রাকশন সরকারি কাজের আদেশের (ওয়ার্ক অর্ডার) বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তাদের কাজের বিলের টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা হয়, ব্যাংকঋণের টাকা কেটে বাকিটা গ্রাহকের হিসাবে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,গত জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকে ডলি কনস্ট্রাকশনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ৪৮৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় ১১০ কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে ৬ কোটি টাকা। বিএফআইইউয়ের প্রতিবেদন মতে, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকে ডলি কনস্ট্রাকশনের ঋণ ছিল ৪৭৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে সরকারের কাছে ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে তাদের পাওনা ছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। জানা গেছে,নির্মাণ, ট্রাভেল প্রতিষ্ঠান,অটো ব্রিকস ও এলএনজিসহ নানা খাতে ডলি কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা রয়েছে। সব মিলিয়ে‘ডলি গ্রুপ’ নামে পরিচিত। রাজধানীর মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে এর কার্যালয়। ডলি গ্রুপের চেয়ারম্যান ডলি আকতার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।বিএফআইইউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ শেষ হলেও ডলি কনস্ট্রাকশন সরকারি বিল পাচ্ছে না। কাজের অগ্রগতি না দেখেই ইচ্ছেমতো এই গ্রাহককে টাকা ছাড় করা হয়েছে।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন,ননফান্ডেড ঋণ ফান্ডেড হতে পারে, মাঝেমধ্যেই হচ্ছে। তবে এ জন্য পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নেওয়া প্রয়োজন। সুত্র জানায় ব্যক্তি লাভবান হওয়ার চিন্তা থেকে াাতাউর রহমান প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপওি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ মনে করেননি।সুত্র-প্রথমআলো
Link copied!