শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি কর্মকর্তাদের গাড়িবিলাস

প্রকাশিত: ১০:৫৪ পিএম, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১

সিটি কর্মকর্তাদের গাড়িবিলাস

নাগরিকদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে দুই ভাগ করা হয়েছিল। উন্নত সেবা কতটা মিলছে, তা সবারই জানা। তবে দুই সিটি করপোরেশনের পরিবহণ বিভাগের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা যে নিজেরাই নিজেদের পরিবহণ সেবার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন, তা বোঝা যায় বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে।এতে দেখা যায়, দুই সিটি করপোরেশনে গাড়ি ক্রয়, বরাদ্দ, ব্যবহার ও জ্বালানি খরচে এক ধরনের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চলছে।অভিযোগ রয়েছে, যারা প্রাধিকারভুক্ত নন, তারাও নির্বিঘ্নে অফিস ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন গাড়ি। এ ছাড়া প্রাপ্যতার চেয়ে ছয়গুণ বেশি থাকলেও নতুন করে গাড়ি কেনা চলমান রয়েছে। প্রশ্ন হলো, এসব যাদের দেখার কথা তারা কী করছেন? সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উচ্চ নৈতিকতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কর্মরত কোনো কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার গাড়ি ব্যবহারে তেমন উচ্চ নৈতিকতার পরিচয় দিতে না পারার বিষয়টি দুঃখজনক।বস্তুত জনবহুল ঢাকা মহানগরীর জনগণ কতটা উন্নত সেবা পাবেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণের ওপরও তা অনেকাংশে নির্ভর করে।শুধু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নয়, বিভিন্ন সরকারি অফিস ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় কর্মরত অনেক কর্মকর্তার মধ্যেই এমন গাড়িবিলাসিতার প্রবণতা রয়েছে। এসব কর্মকর্তা যখন নিজেদের প্রাধিকারের অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তখন তাতে কেবল সরকারি অর্থেরই অপচয় হয় না, এক ধরনের দুর্নীতিও করা হয়। তাছাড়া কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার এমন আচরণে অন্যরাও গাড়িবিলাসে উৎসাহিত হন। কাজেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা অধীনস্থ দপ্তর বা বিভাগের গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। এরপরও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তিনটি গাড়ি স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য রাখা হয়েছে। এ তিনটি গাড়ি স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জরুরি কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও উচ্চ নৈতিকতার পরিচয় দেবেন, এটা প্রত্যাশিত হলেও বাস্তবে তা লক্ষ করা যায় না।ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন ও কাজের পরিধি বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ির প্রাধিকার হালনাগাদ না করে এর যথেচ্ছ ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। এ দুই সংস্থার গাড়ির প্রাপ্যতা সুনির্দিষ্ট থাকা উচিত। গাড়ি বরাদ্দ ও ব্যবহারের নীতিমালাও চূড়ান্ত করা দরকার। দীর্ঘদিন সেটি না করে গাড়ি ক্রয় করা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।দুই সিটিতে এ ব্যাপারে যা করা হয়েছে, তাতে নানা রকম প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। এসব বন্ধে দুই মেয়রকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে দ্রæত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটতেই থাকবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পরিবহণ খাতের অপচয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই কাম্য।যুগান্তর
Link copied!