শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাতে গাভি দিনে ষাঁড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৪, ১২:১৫ পিএম

রাতে গাভি দিনে ষাঁড়


দেশের গরুর হাটগুলোতে কম দামে কেনা গাভিগুলোই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দামি ষাঁড়ে পরিণত হচ্ছে। ক্রেতারাও এসব গাভির মাংস মনের সুখে দামি ষাঁড়ের মাংশ ভেবে কিনে নিচ্ছে-খাচ্ছে? রাতের বেলা কেনা এসব গাভি দিনের বেলা হয়ে যাচ্ছে দেশি ষাঁড়! কম দামে গাভি কিনে তা বেশি দামে ষাঁড়ের মাংস হিসেবে ভোক্তাকে ধরিয়ে দিচ্ছেন কসাইরা। আর এভাবেই চলছে রাজধানীর মাংসের বাজার। গরুর দালাল, ব্যাপারী এবং মহাজন অর্থাৎ কসাইদের সঙ্গে কথা বলেই সময় সংবাদ জেনেছে এসব তথ্য। যদিও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে,রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে কোরবানির ঈদ ছাড়া সাধারণ সময়ে যেসব গরু বিক্রি হয় তার বেশিরভাগ ক্রেতাই কসাই। অর্থাৎ, এই হাট থেকে গরু কিনে জবাই করে বিক্রি করেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। এ পশুর হাটে প্রতি রাতে যেসব কসাই আসেন তারা মূলত কী ধরনের পশু কেনেন, এর মধ্যে সবই কি ষাঁড়, নাকি গাভিও আছে, মহিষের সংখ্যাই বা কেমন? সময় সংবাদের কাছে তথ্য আছে রাজধানীর বিভিন্ন মাংসের দোকানে প্রতিদিন ষাঁড় গরুর মাংস হিসেবে যা বিক্রি করা হয় তার বেশিরভাগই গাভির মাংস! হাটের একাধিক গরুর দালাল এবং ব্যাপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, কসাইরা সাধারণত দুইটি ষাঁড় গরু কিনলে গাভি কেনেন চারটি। যে ষাঁড়ের দাম দুই লাখ টাকা, ঠিক একই ওজনের গাভি পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা কমে। ব্যাপারীরা জানান, সব কসাই ষাঁড়ের সঙ্গে গাভি কেনে। ২০টার মধ্যে ষাঁড় জবাই করে ৬টা, বাকি সব গাভি! এরপর তারা ষাঁড়ের মাংসের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করে। যা সারা দেশেই হয়।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, চামড়া ছাড়ানোর পর বুঝার উপায় থাকে না কোনটা ষাঁড় আর কোনটা গাভি। তখন সব ষাঁড় হয়ে যায়। কিন্তু কোন দোকানে যদি কেউ গাভির মাংস কিনতে চায়, বলবে যে তারা গাভির মাংস বিক্রি করে না। সব ষাঁড় গরু। কিন্তু যদি দেড়শ গরু থাকে তাহলে ষাঁড় আছে ৫০টা, ১০০ আছে গাভি। একাধিক ব্যাপারি বলেন ‘পাঁচটা যদি গাই গরুর কাটে তাইলে একটা ষাঁড় গরু কাটবো। একটা ষাঁড় গরুর রান ঝুলাইয়া রাখবো সারাদিন। এডিতে লাভ হয় বেশি।’শুধু গাবতলী হাট নয়, দেশের সব হাট থেকেই কসাইরা এমন গাভি কিনে তা ষাঁড়ের মাংস হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। 
গাবতলী থেকে প্রতিদিন ট্রাকভর্তি গরু কিনেন কসাইরা। এর মধ্যে কিছু থাকে ষাঁড়, ট্রাকের অধিকাংশ গাভি। যা পরে ষাঁড়ের সাথে মিশিয়ে কসাইরা বিক্রি করে থাকেন। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেলো কোথাও বিক্রি হচ্ছে না গাভির মাংস। সবার দাবি দেশি ষাঁড়ের মাংস বিক্রি করছেন তারা। তাহলে এত গাভি গেলো কোথায়? আসলে প্রায় সবগুলো দোকানেই গাভীর মাংস ষাঁড় হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। তাদের মতে, ক্রেতারা জানে না কোনটা কিসের মাংস, ফলে গাভিকে ষাঁড় হিসেবে চালানো হচ্ছে।
এমন অবস্থায় অতিলোভী মানসিকতা আর বাজার ব্যবস্থাপনাকে দুষলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক। তার মতে, সমাজের সবখানে অধঃপতন থাকবে, নৈতিক স্খলন থাকবে। আর মাংস ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার পরিচয় দেবে! প্রশ্ন হচ্ছে সরকার বাজার ব্যবস্থাপনায় জোর না দিলে ভোক্তারা কি করবে?

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!