শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১

কিছু পৌরসভা বিলুপ্তির কথা ভাবছে সংস্কার কমিশন

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০১:০২ পিএম

কিছু পৌরসভা বিলুপ্তির কথা ভাবছে সংস্কার কমিশন

জনসেবা শুণ্যের কোটায় তারপরেও পৌরসভা। মানুষের কল্যানে না এলেও শুধূ দলীয় লোকদের সু্িবধা দিতেই এসব পৌরসভা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশের অনেক পৌরসভা বিলুপ্তির সুপারিশ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান। সেই সঙ্গে সরকারি চাকুরিজীবীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরুর কথাও জানিয়েছেন।
এছাড়া দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের আইন বাতিল, সরাসরি মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বন্ধসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে কমিশন।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে শর্টকার্ট কোনো পদ্ধতি নেই। তাই একে ঢেলে সাজাতে তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেকের মতামত আমরা গ্রহণ করছি। সেখানে এসব নানা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে এসেছে।
এই সংস্কার কমিশন সারাদেশের ৪৯ হাজার মানুষের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করবে। আগামী ২৪ ফেব্রæয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে দেয়ার কথাও ভাবছে কমিশন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এবং জেলা পরিষদের সব পদ থেকে চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়ছে। যে কারণে বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে অনেকে ভোগান্তিতে পড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করতে কেউ কেউ এসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের কথাও বলছে।তবে সংস্কার কমিশন এই প্রশ্ন এখনই সমাধান দেখছে না। কমিশন মনে করছে, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে চাইলে একই দিনে স্থানীয় সরকারের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে ভোট করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে, মানুষের আস্থা কমছে। গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
পৌরসভা বিলুপ্তির প্রস্তাব কেন? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে দেশে ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে। এসব পৌরসভায় ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী,পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার একটা অংশ সরকার দিবে, বাকি অংশ পরিশোধ করতে হবে পৌরসভার নিজের আয় থেকে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব আয় পর্যাপ্ত না থাকায় সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেয়ার সামর্থ্য অধিকাংশ পৌরসভার নেই।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, কিছু কিছু পৌরসভা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। পৌরসভা করতে লোকাল রিসোর্স লাগে। কিন্তু ওই সব পৌরসভা তাকিয়ে ছিল কেন্দ্রের দিকে। আমিনুজ্জামান বলেন, যখন শুধুমাত্র সরকার বা কেন্দ্রীয় অনুদানের দিকে যখন পৌরসভাগুলোকে পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় তখন তা চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের একশোরও বেশি পৌরসভা রয়েছে যারা বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। যে কারণে সে সব পৌরসভা কার্যত অচল রয়েছে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন,আর্থিকভাবে পুরোপুরি অচল পৌরসভার সংখ্যা একশোর কম না। যে সব পৌরসভা চলে না সেগুলো দেখে শুনে অ্যাসেমেন্ট করে বিলুপ্ত করার সুপারিশের পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে সংস্কার কমিশন মনে করছে, এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই বিলুপ্ত করা যাবে না এসব পৌরসভা। বিলুপ্ত করার পর সেগুলো কি ইউনিয়ন নাকি উপজেলার অর্ন্তভুক্ত করতে হবে সেগুলোও নির্ধারণ করে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হতে পারে।
এখনই এই ধরনের সংস্কার করার পেছনে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন কমিশন প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, যেহেতু সরকার পৌরসভার নির্বাচিত পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে, কোন নির্বাচিত মেয়র নাই, সে কারণে এখন করলেই সবচেয়ে ভালো।
নির্বাচন পদ্ধতি বদলের ইঙ্গিত-বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যে আইন রয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র জেলা পরিষদ বাদে বাকি সব প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরা ওই এলাকার ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। গত মাস থেকে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন কাজ শুরুর পর সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনেকের মতামত নিয়েছে।
কমিশন বলছে, তৃণমূল থেকে নির্বাচন পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে যে সব পরামর্শ এসেছে, সেখানে কেউ কেউ প্রস্তাব করেছে যে সরাসরি চেয়ারম্যান বা মেয়র পদে কোনো ভোট না করার। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড-ভিত্তিক কাউন্সিলর কিংবা মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের ভোটেই ওই পরিষদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবে মেয়র কিংবা চেয়ারম্যান। অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগের মতো মেয়র নির্বাচন হবে না। আগে কাউন্সিলর মধ্যে ভোট হবে। সবাইকে কাউন্সিলর হতে হবে। সেখান থেকে একজন মেয়র হবে।
এমন সুপারিশের পেছনে যুক্তি তুলে ধরে অধ্যাপক আহমেদ বলেন, এতে করে যেমন একক কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ কমবে। তেমনি চাইলে যে কাউকে বরখাস্ত করতে পারবে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তখন নির্বাচিত চেয়ারম্যান অথবা মেয়ররা অপসারণ হবে পরিষদ সদস্যদের ভোটে। তবে এই পদ্ধতি কার্যকরে একই দিনে স্থানীয় সরকারের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে ভোট করার সুপারিশ করার ইঙ্গিতও দিয়েছে সংস্কার কমিশন।
অধ্যাপক আহমেদ বলেন, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় একই দিনে ভোট সম্ভব। আমাদের প্রস্তাবনায় এটি থাকবে।তিনি বলেন, আমরা করণীয় ঠিক করে আইনের খসড়াও চূড়ান্ত করে দিব। একই সঙ্গে কমিশন যে প্রস্তাবনা তৈরি করবে সেখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেয়ার বিষয়টিও থাকবে বলে জানান কমিশন প্রধান তোফায়েল আহমেদ।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান মনে করেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় ভোটও যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেই সঙ্গে সহিংসতাও বেড়েছে। যে কারণে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের ওপর জোর দেন তিনিও।তবে একই দিনে নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে আমিনুজ্জামান বলেন, এটা করা চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ যত নিচের দিকে ভোট হয় তত বেশি সহিংসতা হয়। একই দিনে এটা ম্যানেজ করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি চাকরিজীবীরাও প্রার্থী হতে পারবে?স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় নির্বাচন, বাংলাদেশের নির্বাচনের আইনে সরকারি চাকরিতে থেকে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন যে সব সুপারিশ করার কথা ভাবছে সেখানে সরকারি চাকরিজীবীরাও ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ পেতে পারে।
কারণ হিসেবে সংস্কার কমিশনের যুক্তি হলো- বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে যারা নির্বাচিত হন তাদের অনেকেই শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকে। তাছাড়াও অনেকে জনপ্রতিনিধি বিষয়টিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। এতে করে সেবার মান যেমন কমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে, তেমনি অনেকেই জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন,প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বার (প্রতিবন্ধকতা) উঠিয়ে দেয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী সবার ক্ষেত্রে বার উঠিয়ে দেয়া হবে। সবাই নির্বাচন করতে পারবে।
তিনি মনে করেন, এতে শিক্ষিত ও ভালো কাউন্সিলর পাওয়ার সুযোগ পাবে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও সংসদ সদস্যরা যাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা, স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ক্ষমতা বাড়ানো, বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়ী হওয়ার বিধান বাদ দেয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ নিয়ে কাজ করার কথাও জানিয়েছে সংস্কার কমিশন। সুত্র জানায় পরিত্যাক্ত গত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এক প্রতারনামূলক বক্তব্যে বলেিেছলেন গ্রাম পাবে মহরের সুযোগ। আসলে এই দুর্নীতিবাজ পাহাড়ের ভুমি দখলকারী বাটপার।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!