ঈদ-উল আযহায় এবার দেশে কুরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭ টি। আসন্ন কুরবানির জন্য কোনো গবাদিপশু আমদানির প্রয়োজন নেই। অবৈধভাবে যেন দেশের বাইরে থেকে পশু আসতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা হবে। রোববার (৪ মে) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে কুরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ চলাচল পরিবহন নিশ্চিতকল্পে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সবার জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগে প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা প্রদান,প্রাণির উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের চাহিদাপূরণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য পবাদিপশু কুরবানি। কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সারাদেশে পশুর চাহিদা নিরুপণ, সরবরাহ এবং কোরবানির পশুর অবাধ পরিবহণ নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। এছাড়া নিরোগ ও স্বাস্থ্যবান পশুর ক্রয়-বিক্রয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু কুরবানি করা প্রয়োজন।
আগামী কুরবানি ঈদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যাতে আমাদের গবাদিপশুর বাজার স্থিতিশীল থাকে। পশু যাতে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তা নিয়ে খামারিদের সঙ্গেও কথা হয়েছে।ফরিদা আখতার বলেন,খামারিদের আশ্বস্ত করেছি। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছে-এ বছর গবাদিপশু আমদানি করার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশীয় উৎপাদিত গবাদিপশু কুরবানির জন্য যথেষ্ট। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে।তিনি বলেন, আগামী কুরবানির ঈদে বাজার যাতে কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি, যেকোন সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে মনে করছি।
কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা-প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কুরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরুপণ করেছে। এ বছরে কুরবানিযোগ্য রিষ্টপুষ্টকৃত গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লক্ষ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতিসহ মোট ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এ বছর প্রায় ২০ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশুর উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কুরবানিযোগ্য গবাদিপশু রিষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ, ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক, ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩৭৮টি লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে।
স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান আছে এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড-হরমোনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কুরবানি পশু পরিবহনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ-বাসে বা পরিবহনের লকআপে ছাগল ও ভেড়া যেনো পরিবহন না করে, সে বিষয়ে সচেতনতাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে। প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী কুরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ পরিহার করতে হবে এবং যথাযথ পরিবহণের মাধ্যমে পরিবহণ নিশ্চিত করতে হবে। তা ব্যত্যয় হলে প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কুরবানির পশুবাহী ট্রাক ছিনতাইরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশ), জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হট লাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে। যেকোনো সমস্যা সমাধানে ফোন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কিছু যাতে না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে একযোগে কাজ করবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রধান্য দেয়াসহ যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি না করা হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :