সারাদেশে বর্তমানে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৃত্যুবরনর করছে। করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ এবং ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ক রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হলো রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা হ্রাস পাওয়া (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া)। পাশাপাশি তীব্র মাথাব্যথা, পেশি ও সন্ধিবন্ধনে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত অসুখ, যা এডিস প্রজাতির মশার কামড়ে সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গু প্রতিকারে নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, এ জন্য শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখা হচ্ছে কার্যকর উপায়। এ জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। ডেঙ্গু রোগীর সেসব খাদ্য সংক্রান্ত নিয়ে বলেছেন রাজধানী ঢাকার লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড বিডিএন পল্লবী ডায়াবেটিস সেন্টারের পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান ডরিন। তিনি বলেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পুষ্টিকর খাবার কেন গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু হচ্ছে ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, রক্তে প্লাটিলেট ও লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে পারলে দ্রæত সুস্থ হওয়া যায়। সঠিক খাবারের উপাদান শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহ করে। ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকে, দুর্বলতা কাটে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: ডেঙ্গু রোগীর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হলো প্রোটিন ও আয়রন (লোহা)। পর্যাপ্ত প্রোটিন দেহের টিস্যু পুনর্গঠন করে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাছ, মুরগি, চর্বিহীন লাল মাংস (গরু/ছাগল), ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার থেকে উচ্চমানের প্রোটিন পাওয়া যায়।
রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালংশাক, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, মিষ্টিকুমড়া, মসুর ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা, ডালিম ও কচুশাক অত্যন্ত উপকারী। এসব খাবার শরীরের দুর্বলতা কাটাতেও সহায়তা করে।
ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার: রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কমাতে ডেঙ্গু রোগীর খাদ্যতালিকায় ভিটামিন কে–সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সবুজ শাক-সবজি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি রাখা উচিত। ভিটামিন বি-১২ (ডিম, দুধ, পনির, দই, মাখন) স্নায়ুতন্ত্র ও রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়ক।
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, আঙুর, আনারস, আম, পেঁপে, জাম ও আমড়া এই ফলগুলোয় পর্যাপ্ত ভিটামিন সি থাকে, যা প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ: ডেঙ্গু রোগীর শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) দেখা দিতে পারে। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। ডাবের পানি, ফলের রস এবং স্যুপ শরীরে তরল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস) দেয়া যেতে পারে। আর সহজপাচ্য খাবার যেমন- নরম জাউভাত, খিচুড়ি, স্যুপ রোগীর জন্য উপকারী।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে:ডেঙ্গু রোগীদের তৈলাক্ত, ভাজা, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং যকৃতে অতিরিক্ত চাপ ফেলে। এছাড়া চিনিযুক্ত খাবার, আচার, কাঁচা সবজি, অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার, চা, কফি ও অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ও পরিহার করা প্রয়োজন। কারণ, এসব পানিশূন্যতা বাড়ায়।সুত্র-২৪
আপনার মতামত লিখুন :