বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

চীনে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে কি বলেছিলেন ড. ইউনূস? যেজন্য হতভম্ব ভারত

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম

চীনে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে কি বলেছিলেন ড. ইউনূস? যেজন্য হতভম্ব ভারত

সম্প্রতি চীন সফর করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে দেশটির রাষ্ট্র প্রধানসহ নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি ভৌগোলিক নানা ইস্যুতে তিনি কথা বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের ৭টি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
ইংরেজিতে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ল্যান্ডলকড (স্থলবেষ্টিত) অঞ্চল। সমুদ্রের কাছে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই তাদের। এই অঞ্চলের জন্য আমরাই সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যের জন্য এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। সুতরাং, এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণও হতে পারে। পণ্য তৈরি করা, উৎপাদন করা, বিপণন করা এবং তা আবার চীনে নিয়ে যাওয়া এবং বাকি বিশ্বে তা ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ হতে পারে এখানে।ড. ইউনূসের এমন মন্তব্য নিয়ে ভারতের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে রাজনীতিক মহল এবং সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তারা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে রীতিমতো হতভম্ব। ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ এটিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন, কেউবা এমন বক্তব্যে অবাক হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ভারতের সাতটি রাজ্য ল্যান্ডলকড হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?’ তিনি ড. ইউনূসের বক্তব্য শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের তথাকথিত গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান সর্বদাই ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ ছিল।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি দেশটির সংবাদ মাধ্যম এএনআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্যকে ‘অবাক করা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং নিন্দা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘উত্তর–পূর্বাঞ্চল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ড. ইউনূসের এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার কোনো অধিকার নেই।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয় আনুষ্ঠানিক চুক্তিও হয়েছে।’ সতর্ক করে বীণা সিক্রি বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি উত্তর-পূর্ব ভারতকে সংযোগের অধিকার দিতে আগ্রহী না হয় তাহলে বিনিময়ে তারা নদী তীরবর্তী অধিকার আশা করতে পারে না।’
এ ছাড়া ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বকশি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে চরম হুমকি হিসেবে দেখছেন। এএনআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ভারত বাংলাদেশ তৈরি করেছে এবং এটি করার সময় কোনও মানচিত্রগত সুবিধা গ্রহণ করেনি।’বকশি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন,‘বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রুট শিলিগুড়ি করিডোরকে কাজে লাগিয়ে ভারতকে গলা টিপে মারার উপায় নিয়ে আলোচনা করছে।’তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একই রকম পদক্ষেপ নিতে পারে। বাংলাদেশের সমুদ্র সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।’সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ড. ইউনূসের বক্তব্যটি। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের মো. ইউনূসের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে ল্যান্ডলকড উল্লেখ করে বাংলাদেশকে সমুদ্রের অভিভাবক হিসেবে স্থাপন করার বিবৃতিটি আপত্তিকর এবং তীব্রভাবে নিন্দনীয়।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এই মন্তব্যটি ভারতের কৌশলগত চিকেনস নেক করিডরের সঙ্গে জড়িত দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতার ন্যারেটিভটিকেই তুলে ধরে।’ এ জন্য মূল ভূখন্ড থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে যাওয়ার জন্য বিকল্প সড়কপথ তৈরিরও আহ্বান জানান তিনি।ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক্সে শেয়ার করা পোস্টে দলটির গণমাধ্যম ও প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা ইউনূসের বক্তব্যকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ‘খুব বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
সূত্র: দ্য হিন্দু, দ্য ইকোনোমিক টাইমস, এএনআই, এনডিটিভি

 

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!