শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায় ঝুলন্ত লাইনে ট্রেন যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৪, ১১:৫১ এএম

মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায় ঝুলন্ত লাইনে ট্রেন যায়


মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায় ঝুলন্ত লাইনে ট্রেন যায়। গত ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। অথচ এখনও নিরাপদ হয়নি রেলপথ। মন্ত্রীত্ব পেয়ে এরমধ্যে দুই জন মন্ত্রী নিজের বিয়ের কাজটিও সেরেছেন। রেলওয়ের তথ্য বলছে, এ মুহূর্তে সারা দেশে প্রায় ৬৩ শতাংশ রেললাইনই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা, কমছে ট্রেনের গতি। রেল বিশেজ্ঞরা বলছেন রেললাইন ঝুকিমুক্ত করতে হলে রেললাইনের আমূল সংস্কার করতে হবে। বিষয়টি স্বীকার করে দ্রæত উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস বর্তমান রেলমন্ত্রীর। গত ১৫ বছরে সৈয়দ আবুল হোসেন, সুরন্জিত সেনগুÍপ্ত, মুজিবুল হক, নরুল ইসলাম সুজন কিছুদিন ওবায়দুল কাদের রেলপথ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেও রেললাইন ঝুকিমুক্ত করতে পারেননি। সরেজমিনে দেখা গেছে ঝুকিমুক্ত না থাকায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনের গতি এতটাই কম, যে কোন মানুষ অনায়াসেই হেঁটেই আগে চলে যাচ্ছে। মুল কারণ হচ্ছে রেললাইনের লোহার পাত, পাথর ও ¯িøপার ছাড়া প্রায় ঝুলন্ত লাইনে ট্রেনের অবিশ্বাস্য যাত্রা। এতে ট্রেনের গতির চেয়ে মানুষের হাটার গতি বেশী হচ্ছে। সুত্রগুলো জানায় বছর জুড়েই পাথর কেনাসহ নানারকম মেইনটেনেসের নামে শতশত কোটি টাকা খরচ করা হলেও কখনোই রেললাইন ঝুকিমুক্ত করা যায়নি। কালো বিড়াল ধরার ফাঁদ পেতেও কালোবিড়াল ধরা যায়নি। রেলের এযাবত যতগুলো মহাপরিচালক দায়িত্বে এসেছেন তারা শুধু নিজের আখের ঘুচিয়েছেন। চাকরিটাই করেছেন। এবং চাকরি শেষে একটি কনসালটেন্স ফার্মে গিয়ে যোগ দিয়ে কৌশলে রেলের ঠিকাদারী করছেন। বিদেশী অর্থায়নে করা যতগুলো প্রকল্প রেলওয়ে হাতে নিয়েছে তার সবগুলো প্রকল্পের কাজ শর্তের বেড়াজালে ফেলে ওই ফার্ম কাজ নিয়েছেন। রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার রেলপথে ট্রেন চলে কচ্ছপের গতিতে। কারণ, লাইন নড়বড়ে। অবস্থা এমন যে, হেঁটে যে কোন মানুষই ট্রেনের আগে চলে যেতে পারবে।লাইনের নিচ থেকে মাটি সড়ে গেছে, নেই পাথর। তবুও দিব্যি চলছে ট্রেন। কারো কোন মাথাব্যথা নেই।
রাজবাড়ীর পাটুরিয়া জংশন থেকে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ পুরোটারই এ অবস্থা। জং ধরে মাইলের পর মাইলজুড়ে ক্ষয়ে গেছে রেললাইন। মাটি সরে যাওয়ায় বেশিরভাগ স্পটেই শূন্যে ঝুলে আছে লোহার পাত। ৫০-৬০ বছর আগের কাঠের ¯িøপারে এখনও চলছে ট্রেন। মাইলজুড়ে  নেই সেই ¯িøপার; যতটুকুই বা আছে সেটাও ভাঙা আর জরাজীর্ণ। একেবারেই পাথর নেই ১২ কিলোমিটার রেলপথে। স্থানীয়রা বলছেন, বছর পাঁচেক আগে ইটের খোয়া দেয়া হলেও তাও হারিয়ে গেছে। নাট-বল্টু নাই, ফিশপ্লেট কিংবা সেফটি বন্ধনিগুলোও নড়বড়ে। হাত দিলেই খুলে আসছে ফিশপ্লেট আর কাঠের ¯িøপার।
এভাবেই ক্ষয়ে গেছে রেললাইন, তবুও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। পাটুরিয়া থেকে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত রেলপথের এক ইঞ্চিতেও নেই পাথর। আর ¯িøপার যা রয়েছে সব কাঠের, পচে গেছে বহুকাল আগেই। তথ্য বলছে, শুধু এ লাইনটি নয়, সারা দেশে রেলপথের ৬৩ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ।
এমন অবস্থায় যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বলেন, যেগুলোতে সুযোগ আছে, তা সংস্কার করতে হবে। আর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলে তা তুলে নতুন লাইন বসাতে হবে। না হলে শুধু অর্থের অপচয় হবে; কিন্তু মানুষ সেবা পাবে না। এটি পরিত্যক্ত কোন ট্রেন লাইন না, প্রতিদিনই এই লাইন ধরে চলাচলকারী ট্রেনে হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। আর বরাবরের মতো এবারও সংস্কারের গৎবাঁধা আশ্বাস দিতে ভুলেননি রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। তিনি বলেন,‘রেললাইনের অবস্থা ভালো না। আমরা ক্রমান্বণে ঝুঁকিপূর্ণ লাইন অপসারণ করে নতুন লাইন বসাবো ইনশাআল্লাহ। অভিজ্ঞমহল মনে করেন রেল থেকে কালো বিড়াল মুক্ত করতে না পারলে রেল তার সঠিক সেবায় পৌছতে পারবেনা। যাত্রীদের ঝুকি নিয়েই চলতে হবে।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!