মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

সরকারে সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিলো দ্য ইকোনমিষ্ট

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ০২:৪৮ পিএম

সরকারে সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিলো দ্য ইকোনমিষ্ট

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও অন্তর্র্বতী সরকারের করণীয় নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 
‍‍`পুনরায় শুরু করেছে বাংলাদেশ‍‍` শীর্ষক প্রচ্ছদ নিবন্ধে বলা হয়েছে, নানা কঠিন সমস্যা সত্ত্বেও, বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে বাংলাদেশের এবং দেশটি এখন নৈতিকতার বলে বলীয়ান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন নেতা পেয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনটির বাংলাদেশ নিয়ে প্রছদ নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস। 
‍‍`বাংলাদেশ গুরুত্ব বহন করে, এ দেশটিকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না‍‍` উল্লেখ করে প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুসংবাদ হচ্ছে যে, দেশটির অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতি দ্রæত কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম এবং দেশটির সুশীল সমাজ দৃঢ়চেতা। এতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করার পর নোবেল শান্তি বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মতো অনেক বাংলাদেশি এটিকে স্বাধীনতা লাভের অর্ধ শতাব্দী পর ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলছেন।
ম্যাগাজিনটি লিখেছে, এই মুহূর্তের অঙ্গীকার পূরণ করতে বাংলাদেশকে এখন পুরোনো স্বৈরাচারীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আরো অনেক কিছু করতে হবে। অবশ্যই নষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিচ্ছন্ন করতে হবে। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিরায় শিরায় ছড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক গোষ্ঠীতন্ত্র ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানসমূহ; যেগুলোর কারণে দেশটি দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে এবং নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে আড়ষ্টতা রাজনীতিকে বিষিয়ে তুলেছে।
ইকোনমিষ্ট বলছে,ড. ইউনূসের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে সঠিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। কিন্তু প্রথমে তাকে শেখ হাসিনার দখলকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন: নির্বাচনী কমিশন ও আদালতগুলোকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। দেশটিকে গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে আসার জন্য ড. ইউনূসের কাছে সময় খুবই কম উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়েছে, তার সাফল্য বা ব্যর্থতা ১৭ কোটি বাংলাদেশির জীবনযাত্রার সফলতা নির্ধারণ করবে এবং চীন, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় প্রভাব বিস্তার করবে। 
এতে বলা হয়, ড. ইউনূস একটি অত্যন্ত কঠিন কাজের সম্মুখীন। তার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঢেউ প্রতিরোধ করা, যা অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। এর মানে হচ্ছে যে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে টেকনোক্র্যাট দ্বারা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে দ্রæত কাজ করার পরামর্শ দিয়ে নিবন্ধটিতে বলা হয়,অনির্বাচিত কেয়ারটেকার সরকারের খুব বেশিদিন ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তাতে তারা বৈধতা হারাতে বা আরো খারাপ কিছু হতে পারে অথবা এর সামরিক সমর্থকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে প্রলুব্ধ হতে পারে।
ম্যাগাজিনটি সতর্ক করে বলছে যে, দেশটি পাকিস্তানের মতো ইসলামপন্থিদের শিকার হতে পারে। আর্থিক টানাটানি খারাপ হলে বাংলাদেশ সস্তা ঋণ ও অস্ত্রের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। যার ফলে প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক অস্থিতিশীল হতে পারে এবং গণতন্ত্র আরও বিনষ্ট হতে পারে।
নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, যখন অর্থনীতির কথা আসে, তখন সরকারের উচিত ব্যালেন্স-অফ-পেমেন্ট ঝুঁকির উৎকণ্ঠা কমাতে বাইরে থেকে আরও তহবিল জোগাড় করা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন বাণিজ্য চুক্তির জন্য চেষ্টা করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ড. ইউনুসকে অবশ্যই দেশের তরুণ সমাজ, ক্রমবিকাশমান এবং ক্রমবর্ধমান শহুরে জনসংখ্যার আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নেতাদের কাছে নতুন ধারণার ব্যাপারে নিজেকে উন্মুক্ত করার আহ্বান জানাতে হবে।
ম্যাগাজিনটি অবশ্য বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সহায়তা করার জন্য ভারতকে দায়ী করে বলেছে যে, যদি দেশটি একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশী চায়, তবে কিছু কাজ করার দরকার হবে। দেশটির (ভারত) উচিত হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আহ্বান জানানো এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!