রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আগেই ফাইনাল অ্যাকশন!

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম

ঈদের আগেই ফাইনাল অ্যাকশন!


আব্দুল্লাহকে উদ্ধারে তৎপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত এবং সোমালি পুলিশ। এরইমধ্যে জাহাজটি উদ্ধারে মোতায়েন করা হয়েছে যুদ্ধজাহাজও। এবার জলে-স্থলে চাপে দস্যুরা,ঈদের আগেই ফাইনাল অ্যাকশন! বাংলাদেশি পতাকাবাহি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিক ও জাহাজকে মুক্ত করার চেষ্টা এরই মধ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে মালিকানা প্রতিষ্ঠান কবির গ্রæপ। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ শুরু হলেও এখনো মুক্তিপণের টাকার অঙ্ক নিয়ে মুখ খুলছে না মালিকপক্ষ।
তবে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে সবাই। আশা করা হচ্ছে, দ্রæত সময়ের মধ্যেই অবসান হবে জিম্মিদশার। তবে এখনো কারও কাছ থেকেই দস্যুদের মুক্তিপন দাবির কথা শোনা যায়নি। জানা গেছে, বর্তমানে জাহাজটির অবস্থান জিফলে উপকূলে।
সোমালিয়ার জলদস্যুদের জলে-স্থলে ভীষণ চাপে রেখেছে আন্তর্জাতিক বাহিনী ও সোমালি পুলিশ। জাহাজ উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে ইইউ নেভাল ফোর্সও। তাদের ‘অপারেশন আটলান্টার’ একটি যুদ্ধজাহাজ আবদুল্লাহর কাছেই অবস্থান করছে। জিম্মি জাহাজকে ঘিরে চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টারও।
বিবিসি বলছে, জিম্মি করা জলদস্যুদের সাথে পাটল্যান্ডের ভূমির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযানও শুরু করেছে সোমালিয়ার পুলিশ। জলদস্যুরা যাতে সংগঠিত হতে না পারে এবং স্থলভাগ থেকে কোনো সাহায্য না পায় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে সোমালি পুলিশ।
গত শনিবার বিবিসি সোমালি বিভাগকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুফ বলেন, জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমরা পূর্বাঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করেছি, যাতে তারা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনও সহযোগিতা না পায়।
বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বিবিসিকে বলেন, মৃত্যু ঝুঁকি আছে এমন কোনও অভিযানে অনুমতি দিবে না বাংলাদেশ সরকার। সরকার চাইছে আগের মতোই মুক্তিপণের মাধ্যমে দস্যুদের কাছ থেকে নাবিকদের উদ্ধার করতে।এরইমধ্যে আবদুল্লাহ জাহাজে দস্যুদের জিনিসপত্র পৌঁছে দেয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়িকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এমভি আব্দুল্লাহকে মুক্ত করতে আল্টিমেটাম দিয়েছে সোমালি পুলিশ। দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পাটল্যান্ড পুলিশ বিভাগ বলছে, জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।
তবে নিজেদের ভূমিতে অভিযান চালালেও, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে যে কোনও ধরনের অভিযানের ব্যাপারে আপত্তি আছে বাংলাদেশ সরকার ও মালিকপক্ষের। কেন না, এই মূহুর্তে নাবিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকার চাচ্ছে মুক্তিপণের মাধ্যমেই জাহাজটি উদ্ধার করতে।তবে জাহাজটি ঠিক কিভাবে উদ্ধার হবে সেটি নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। দস্যুদের সামনে দুটি উপায়, হয় সোমালি পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণ করা, নয় তো এমভি রুয়েনের পরিণতি ভোগ করা। অবশ্য এক্ষেত্রে মুক্তিপণ ছাড়াই জিম্মি নাবিকরা মুক্তি পাবেন, নাকি তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা আরও বাড়ছে সেটি নিয়েও চলছে আলোচনা।
কবির গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার ওপর জোর দিচ্ছি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা শুরু করেছি আমরা। আশা করছি দ্রæত সময়ের মধ্যে জিম্মিদশার অবসান হবে। তবে এখনো কোনো ধরণের মুক্তিপণ দাবি করেনি সোমালিয়ান জলদস্যুরা।
শুক্রবার নাবিকদের জাহাজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব নাবিকই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলছেন, জাহাজে পানির সমস্যা হচ্ছে। দিনে এক ঘণ্টা পানি ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে নাবিকদের। অদূরে একটি বিদেশি জাহাজ টহল দেয়ায় নাবিকদের বেশিরভাগ সময় ব্রিজে নিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত ভালো আছেন সবাই।
জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ খান জানান, জলদস্যুরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে পানি ব্যবহারে। যে কারণে তার ভাইসহ কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সোমালিয়ার পাটল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুফ বলেন, এমভি আবদুল্লাহ এখন আছে জিফলের উপকূলীয় এলাকায়।
এদিকে আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও বসে নেই জলদস্যুরা। আন্তর্জাতিক বাহিনীর হামলা মোকাবিলায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে বিমান বিধ্বংসী ‘কামান’ কিংবা স্টেনগানের মতো ভারী অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। আকাশের দিকে তা তাক করে রাখার একটি ছবিও প্রকাশ করেছে সেখানকার গণমাধ্যম। সরকারি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাহিনী, জলদস্যুদের অনড় এবং পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গেলো ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে আবর আমিরাতগামী বাংলাদেশের জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজটিতে আছেন ২৩ জন নাবিক। যাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটি চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠি কবির গ্রæপের। সাধারণত পণ্য পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত হয় জাহাজটি।
 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!