প্রত্যেক বাঙালিকে সাধ্য অনুযায়ী সাধারণ মানুষের তথা সমগ্র জাতির উন্নতিতে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। ১৯৭৩ সালের এইদিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম জাতীয় সংসদের প্রথম ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান। এসময় বঙ্গবন্ধুও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমস্ত জনগণের ন্যায়সম্মত সমাজতন্ত্রের ভিত্তি মনে রাখতে হবে। স্থিতিশীল সমৃদ্ধি অর্জনের কোনও সহজ রাস্তা নেই। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বর্তমানে দেশ যেসব বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা মোকাবিলায় সরকারের নীতি ও কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর জাতীয় সংসদ মুলতবি করা হয়। সেদিন সংসদীয় রীতি অনুযায়ী তার ভাষণের ওপর আলোচনাও হয়। এর আগে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভবনে পৌঁছালে গেটে স্পিকার মাহমুদুল্লাহ ও ডেপুটি স্পিকার বাইতুল্লা তাকে স্বাগত জানান।
উল্লেখ্য, দু’বছর আগে এপ্রিলেই মুজিবনগর ঘোষণা প্রকাশ হয়। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী বাণী ও পরে সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান ও তাঁর কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ জীবনের মূল্যে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু সেটা পরম অর্জন নয়। শান্তি সমৃদ্ধি অর্জনের উপায় ও প্রথম সোপান মাত্র।
বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ নীতিতে অবিচল থাকবে
বৃহৎ শক্তির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার ইচ্ছে বাংলাদেশের নেই। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বাংলাদেশে তার এই স্বাধীনতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জোট নিরপেক্ষতা, সক্রিয় নিরপেক্ষতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে অবিচল থাকতে বদ্ধপরিকর। জাতীয় সংসদে ভাষণ দানকালে রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ একথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক দেশের সঙ্গে সার্বভৌম সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অপর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বীকৃতি এবং অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ সম্ভব হয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের নীতি অনুসরণ করে এশিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরা আন্তরিক সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছি। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ইচ্ছা আমরা সঙ্গতভাবেই বারবার ব্যক্ত করেছি।
আটক বাঙালিদের ফেরাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে
পাকিস্তানকে সুবুদ্ধি ও মানবিক মূল্যবোধের পথে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা চালাতে বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশিরা যাতে ফিরে আসতে পারেন সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এবং উপমহাদেশের শান্তি সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সার্বভৌম ক্ষমতার ভিত্তিতে সরকার অন্যান্য বিষয়ে নিষ্পত্তি করতে সদা প্রস্তুত। রাষ্ট্রপতি বলেন মানবিক সমস্যাবলীর সমাধানে সরকার ইতোমধ্যে বিনাশর্তে ও অনতিবিলম্বে পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, যে সমস্ত মানবিক ও রাজনৈতিক সমস্যা উপমহাদেশের উত্তেজনা হ্রাস করা ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে সেগুলো বাংলাদেশের দৃষ্টিতে গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
উল্লেখ্য, ঠিক এর আগের দিন কোনও চাপের মুখেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করবেন না বলে জানিয়ে দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো। তিনি অভিযোগ করেন, উপমহাদেশে পরিস্থিতি উন্নয়নে ভারত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। মার্কিন সাময়িকী ফরেন আফেয়ার্স-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ভুট্টো বলেন, পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের আটকে রাখা কিছুতেই উপমহাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার অনুকূল নয়। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন