মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বাংলাদেশের অন্যতম ধনী শিক্ষক নেতা মঞ্জুরুল হক লাইসেন্সবিহীন ডেভলপার ব্যাবসায়ী

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ০১:৪১ পিএম

বাংলাদেশের অন্যতম ধনী শিক্ষক নেতা মঞ্জুরুল হক লাইসেন্সবিহীন ডেভলপার ব্যাবসায়ী

বাংলাদেশের অন্যতম ধনী শিক্ষক নেতা মঞ্জুরুল হক লাইসেন্সবিহীন ডেভলপার ব্যাবসায়ী
বিশেষ প্রতিনিধি: রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ মঞ্জুরুল হক, পেশায় শিক্ষক হলেও লাইসেন্স ছাড়াই ডেভলপার ব্যবসা করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।ব্যবহার করেন কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের দামি গাড়ি। গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-২৮৪৩৬১। মোটা অংকের টাকা খরচ করে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়াতে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তার মূল ব্যবসা বিল্ডিং ডেভলপিং।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এক্ষেত্রে তার নেই কোন ডেভলপার লাইসেন্স। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পরিচিত মহলে প্রচারণা চালিয়ে সদস্য সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করে বিল্ডিং নির্মাণের মাধ্যমে  এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন মোঃ মঞ্জুরুল হক।পরবর্তীতে সেগুলোর শেয়ার বিক্রি করে কামিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। উত্তরখান, মাস্টারপাড়া, কুড়িপাড়া জিয়াবাগ, ময়নারটেক, চাঁনপাড়া সহ দক্ষিণ খান আর্মি সোসাইটি, দিয়াবাড়ি ইত্যাদি স্থানে তার প্রায় ১১ থেকে ১২টি বিল্ডিং প্রজেক্ট এর কাজ রয়েছে। বর্তমানে চলমান লাভজনক প্রজেক্টের মধ্যে আর্মি সোসাইটিতে দুইটি এবং ময়নারটেক সরকারি স্কুলের সন্নিকটে একটি প্রজেক্ট চলমান। ইতিমধ্যে এ সকল প্রজেক্টের অধিকাংশ শেয়ার বিক্রি করেছেন। একটি প্রজেক্টে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত শরিকদের সাথে মামলা জনিত ঝামেলায় ও জড়ান তিনি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়নারটেক স্কুল সন্নিকটস্থ প্রজেক্টের দায়িত্বশীল একজন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন এখানে অবশিষ্ট থাকা দুটি শেয়ারের একটি বিক্রি করার চেষ্টাও করছেন মঞ্জুরুল হক। আর এই ডেভলপার ব্যবসায় অনেকের সাথে লেনদেন জড়িত ঝামেলার কারণে বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট থেকে তিনি বিতাড়িত হন বলে জানা যায়। মূলত তার কোন লাইসেন্স না থাকায় ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না বলে অনেকে তার  কর্মস্থলে এসে টাকা দাবি করেন,যে বিষয়টি তার কয়েকজন সহকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়।বিভিন্ন লোভনীয় অফারে তার কর্মস্থলের কয়েকজন শিক্ষককে ইতিমধ্যে তিনি তার সাথে ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করছেন বলেও সূত্র মতে জানা যায়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়,এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে।তাদের অনেকের সাথে তিনি তার কয়েকটি প্রজেক্টের শেয়ার কেনার বিষয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা ও করেছেন বলে জানা যায়।
মূলত ২০০২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চাকুরি করার সুবাদে তিনি একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিস্তৃত করেন তার ডেভলপার ব্যবসা,হয়ে ওঠেন কোটি কোটি টাকার মালিক। সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারে নানা রকমের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে অনেক বছর ধরে জড়িত মঞ্জুরুল হক। তারই ধারাবাহিকতায় ডেভলপার ব্যবসার পাশাপাশি তিনি কসমোপলিটন স্কুল এন্ড কলেজ সূত্রাপুর এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। যদিও সেখান থেকেও তিনি পরবর্তীতে বহিষ্কৃত হন। ২০২১ সালে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের কেন্দ্রীয় মসজিদের উত্তর পাশের ভবন মাসিক সাড়ে ছয় লক্ষ টাকায় ভাড়া নিয়ে ব্রাইটন একাডেমি নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার কে সাথে নিয়ে। কিছুদিন পর অন্যান্য শেয়ার হোল্ডার কর্তৃক সেখান থেকেও বহিষ্কৃত হন তিনি।
এ সকল বিষয়ে মঞ্জরুল হকের মতামত জানতে তার কর্মস্থল শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে তার মুখোমুখি হলে তিনি এ সকল বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করেন।
পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য তার পক্ষে জাহিদ ফারুকী নামক একজন ব্যক্তি সাংবাদিককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে জাহিদ ফারুকী পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছবি সাংবাদিকের মুঠো ফোনে পাঠিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে তিনি একাধিক মেসেজ পাঠিয়ে কয়েকটি ডিলিট ও করে ফেলেন। পরবর্তীতে জহিরুল ইসলাম নামে আরো একজন ব্যক্তিকে দিয়ে সাংবাদিককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। 
শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় জড়িত থেকে  মানুষের বিশ্বাস, সম্মানের সুযোগে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারে, বিধি বহির্ভূতভাবে লাইসেন্সবিহীন ডেভলপার ব্যবসা পরিচালনা করে, কিছু মানুষের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন জড়িত ঝামেলায় জড়িয়ে, কোটি কোটি টাকা কামানোর নেশায় একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে অসম্মান করেছেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান সঠিক অনুসন্ধান পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে পুঁজি করে কেউ কোন অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দুঃসাহস দেখাবে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান আরো বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!