রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

আন্দোলনের রাজা আওয়ামী লীগ, প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৪, ১০:১১ এএম

আন্দোলনের রাজা আওয়ামী লীগ, প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে

আন্দোলনের রাজা আওয়ামী লীগ, প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাঠে-ঘাটে সতর্ক পাহাড়ায় থাকবে সহযোগী সংগঠন অগ্রভাগে থাকবে ছাত্রলীগ। দলীয় সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মার খাবে না, মার দিবে। কোটা বিরোধীরা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলেই ব্যবস্থা। বিষয়টি রাজনৈতিক রুপ দেওয়ায় রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করার সব প্রস্তুতি নিয়েছে আওযামী লীগ। আওয়ামী লীগের সিনিয়ির ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিকরা মনে করেন দেশে কোটাবিরোধীদের হঠকারিতার কারণেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে হঠাৎ সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কোটাবিরোধীরা। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের চড়াও হওয়া শুধু শুধূ হয়নি। নানারকম উস্কানী বক্তব্য দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। উসকানির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন তারা। নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করলেও কোটার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনে ছাত্রদল ও শিবিরকর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলেও মনে করে ক্ষমতাসীনরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষা না করে সহিংসতা অব্যাহত রাখা হলে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক কোনো দুষ্টচক্র যদি আন্দোলনে ইন্ধন দেয়, তবে আমরাও তা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি আদালতের মাধ্যমেই সমাধান হবে।’
সরকারদলীয় নেতারা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে মাঠে থাকলেও কোটাবিরোধী আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। কিন্তু গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে আক্রমণের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উসকে দিয়েছে। ভাঙচুর করেছে, অগিন্সংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে, ওরা কারা। অথচ এই কয়েক সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলেছে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে অবরোধ করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো বিবাদ হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্য সমাধান দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিকৃত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ¯েøাগান এবং সর্বশেষ সোমবার আন্দোলনকারীদের আটকে রাখার গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে আকস্মিক হামলা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সর্বশেষ বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে মঙ্গলবার রাতে। এসব কিসের লক্ষন। এরজন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। ছাড় দেওয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধেও মাধ্যমে তরতাজা বুকের রক্ত দিয়ে যারা দেশ স্বাধীন করেছেন তাদেও রক্তের সাথে যারা বেঊমানি করবে তাদেও কিসের ছাড়? কঠোর ব্যবস্থা নিতে অ্যাকসন মুডে থাকবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওযামী লীগ। 
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে। এই আন্দোলনকারীদের একটা অংশ রাজাকারের পক্ষে কথা বলছে। এটা স্পষ্ট, এর পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত। ছাত্রলীগকে দোষ দেওয়া যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সব দোষই যেন নন্দ ঘোষ ছাত্রলীগের।’
গত ১৪ জুলাই রোববার রাত থেকেই কোটা আন্দোলন নিয়ে মতলববাজদের অস্থিরতা শুরু হয়। ১৫ জুলাই সোমবার দুপুরের পর একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদেও ভিন্নমুখী আচরণের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ রাস্তায় বের হয়। এ সময়ে পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় কোটাবিরোধীরা। এসময় উভয় পক্ষের কয়েকশ জন আহত হন। এ ঘটনার রেশ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ জুলাই মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এসব কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় ৬জন নিহত ও বিপুলসংখ্যক আহত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, শুরু থেকেই তারা এই আন্দোলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছিলেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস পথে মোড় নিতে থাকে ছাত্রদল-শিবিরকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ ¯েøাগানের মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের উসকে দিয়েছে।এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’ এমন বক্তব্যকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আন্দোলনকারীদের উসকে দিয়েছে সেই চক্রটি। তাদের প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন বিকেল ৫টায়, কিন্তু আন্দোলনকারীরা গভীর রাতে কেন ক্যাম্পাসগুলো উত্তপ্ত করল, এর পেছনে কারা?’ নেতারা বলেন, ১৫ জুলাই সোমবার সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা টিএসসিতে কর্মসূচি পালন করছিল। বিকেল ৩টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কথা ছিল, কোটাবিরোধীরা আড়াইটার মধ্যে তাদের কর্মসূচি শেষ করে ওই এলাকা ত্যাগ করবে। দুপুর ২টা পর্যন্ত এটাই ঠিক ছিল। কিন্তু এর পরই পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। আন্দোলনকারীরা টিএসসি এলাকায় অবস্থান বজায় রাখে। বেলা আড়াইটার দিকে তাদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে উত্তরপাড়া নামে পরিচিত হলগুলোর দিকে যায়। তারা প্রথমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে উসকানিমূলক ¯েøাগান দেয়। সেখানে কেউ তাদের বাধা দেয়নি। এরপর তারা জিয়াউর রহমান হলের গেটের সামনে গিয়ে মাইক ব্যবহার করে একই ধরনের ¯েøাগান দেয়। তখনো ছাত্রলীগ বা অন্য কেউ প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সেখান থেকে বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে মিছিলকারীরা ‘সন্ত্রাসীদের ধরে নিয়ে আসুন’ এ রকম উসকানিমূলক ¯েøাগান দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের কক্ষ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। মূলত সেখান থেকেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। এরপর ছাত্রলীগ যা করেছে তা প্রতিক্রিয়া মাত্র। ওরা মঙ্গলবার দেশের বিভিন্নস্থানে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতেও ভাংচুর করেছে। তাহলে ওরা কারা। ওরা মেধাবীনা স্বাধীনতা বিরোধী রগকাটা শিবির তা কার্যকলাপেই প্রমাণীত কাজেই ছাড় নেই।
আওয়ামী লীগের একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘আন্দোলনকারীরাই সংঘাতে উসকানি দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে আক্রমণের মাধ্যমে তারা সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে তারাই প্রথম উসকানি দেয়। ছাত্রলীগের মতো লাখো নেতাকর্মীর একটা সংগঠন কতটা মুখ বুজে সহ্য করবে?’
খোঁজ নিয়ে জানা যায় গতকাল দিনভর দফায় দফায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে কোটা আন্দোলন মোকাবিলায় সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে কোনো প্রকার উসকানিতে পা না দিতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের শাখার নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় সতর্ক পাহারায় থাকতে বলা হয়েছে। কোটাবিরোধীরা চোগাগুপ্তা হামলাও চালাতে পাওে কাজেই কঠোর নজরদারিতে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে এদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কন্যার নেতৃত্বে দেশের শাসনভার তা রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিরোধ করতে সতর্ক পাহাড়ায় থাকবে।দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধে আগেও ছিল আওযামীলীগ,আগামীতেও থাকবে আওযামী লীগ। মনে রাখতে হবে: আন্দোলনের রাজা আওযামী লীগ।
 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!