মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যেই একটি হাসপাতালে বোমা বর্ষণ করেছে সেনা সরকার। ভয়াবহ এই হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। এমনটাই জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা এক ত্রাণকর্মী। চলতি মাসেই দেশটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে এবং এর আগে থেকেই বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে তীব্র হামলা চালাচ্ছে সেনা সরকার। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ড
সংঘাত পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই বিমান হামলা বাড়িয়েছে জান্তা। ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এক দশকের গণতান্ত্রিক যাত্রা থেমে যায়। এর মধ্যেই সেনাবাহিনী আসন্ন ২৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি, এটি চলমান সংঘাত থেকে উত্তরণের পথ। কিন্তু বিদ্রোহীরা বলছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তারা কোনও ভোট হতে দেবে না। আর সেই এলাকা পুনরুদ্ধার করতেই হামলা জোরদার করেছে জান্তা।
মিয়ামারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের ঘটনাস্থলে থাকা ত্রাণকর্মী ওয়াই হুন আউং জানান, বুধবার সন্ধ্যায় সামরিক সরকারের একটি যুদ্ধবিমান রাখাইনের ম্রাউক-ইউ শহরের হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহত হয়েছেন আরও ৬৮ জন, এই সংখ্যাও আরও বাড়বে।’হামলার পর রাতেই হাসপাতালের বাইরে অন্তত ২০টি ঢাকা দেয়া মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে জান্তা সরকারের কোনও মুখপাত্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাখাইন প্রদেশের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে রাখাইনভিত্তিক জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সেনা অভ্যুত্থানের অনেক আগে থেকেই প্রদেশটিতে সক্রিয় ছিল এই গোষ্ঠীটি।
আরাকান আর্মির স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে হওয়া এই বিমান হামলায় হাসপাতালের ১০ জন রোগী ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
সংঘাত পর্যবেক্ষকদের মতে, আরাকান আর্মি সেনা সরকারের জন্য শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে। রাখাইনের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টিই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে তাদের লক্ষ্য মূলত রাখাইন অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। এই অঞ্চলের একদিকে বঙ্গোপসাগর, আর অন্যদিকে পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা অঞ্চল।
এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও অতীতে বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে অঞ্চলটির মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মতো ঘটনাও রয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রাখাইন অঞ্চল অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এই পদক্ষেপ সেখানে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবিøউএফপি) গত আগস্টে জানিয়েছিল, সেখানে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।ছবি-সংগৃহীত

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :