রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১

পুলিশ ও আ’লীগের সশস্ত্র সমর্থকরা বিক্ষোভকারীদের ওপর সমন্বিত হামলা চালিয়েছে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম

পুলিশ ও আ’লীগের সশস্ত্র সমর্থকরা বিক্ষোভকারীদের ওপর সমন্বিত হামলা চালিয়েছে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার কীভাবে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় ক্যাডারদের নামিয়ে দিয়েছিল,তার বিবরণ উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে,আওয়ামী লীগের সমর্থক ও পুলিশ সদস্যরা সমন্বিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। বিক্ষোভ যতই এগিয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী তত বেশি করে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকদের বিক্ষোভ দমনে অন্তর্ভুক্ত করতে থাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়,অনেক অভিযানে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকেরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন কিংবা পুলিশের সারির পেছনে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার অভিযানের পুরোটা সময় পুলিশি ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন তারা। 
আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা পথচারী মানুষকে থামিয়ে তল্লাশি এবং বিক্ষোভকারীদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়াসহ নানা কাজ করেছেন। সংগঠিতভাবে,আপাতদৃষ্টে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এসব করা হয়েছে।অভ্যন্তরীণ একটি সূত্রের খবর,যাত্রাবাড়ী থানায় আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা অবস্থান করেছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অধীন পুলিশের রাজনৈতিকীকরণের মাধ্যমে এই কাজ সহজতর হয়েছিল; যা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে গভীর যোগাযোগ তৈরি করেছিল।
বিশেষত আগস্টের শুরুর দিকে বিক্ষোভ যখন জোরালো হয়ে ওঠে, তখন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকেরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আরও বড় পরিসরে নিজেরাই হামলা চালাতে শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক ওএইচসিএইচআরকে জানান, আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগ সমর্থকদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম হয়েছে। তাদের অনেকেই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অবৈধ উদ্দেশে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন।বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ওএইচসিএইচআরকে ৯৫ জন পুলিশ সদস্য,আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের অনুমোদিত সংগঠনের সদস্যের নাম এবং কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে,বিক্ষোভ চলাকালে সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য মানুষকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন তারা। তাদের মধ্যে ১০ জন তখন সংসদ সদস্য ছিলেন। তালিকায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ১৪ জন। এ ছাড়া যুবলীগের ১৬ নেতা, ছাত্রলীগের ১৬ নেতা এবং পুলিশের সাত সদস্যের নাম রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়,আওয়ামী লীগ–সমর্থকদের হামলাগুলো ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর নিজস্ব প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং তাদের সমর্থনে পরিচালিত হয়েছিল। কিছু হামলায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় দলীয় নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্যরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়,গত ১৯ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় ক্রিসেন্ট হাসপাতালের কাছে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকেরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালান। একই দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে দলটির কয়েক শ সমর্থক রাজধানীর রায়েরবাগে মুজাহিদনগর কেন্দ্রীয় মসজিদে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় বয়স্ক দুই ব্যক্তি নিহত হন। মসজিদে থাকা অন্যরা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও অন্তত ৮০ জন আহত হন।
১৯ জুলাই পুলিশের সঙ্গে মিলে যুবলীগের সমর্থকেরা সংসদ ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে বাধা দেন। এ সময় যুবলীগ সমর্থকেরা মানববন্ধন কর্মসূচির প্রধান বক্তাকে মারধর করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়,২ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলের সামনে পুলিশের সহযোগিতায় সশস্ত্র যুবলীগ–সমর্থকেরা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান। রড ও পিস্তলের আঘাতে আহত হন বেশ কয়েকজন, যাদের মধ্যে নারীও ছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, ৩ আগস্ট কুমিল্লায় সশস্ত্র ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা আগ্নেয়াস্ত্র,ছুরি ও রড নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান। সশস্ত্র ব্যক্তিরা একেকটি দলে ৬০ জন করে ভাগ হয়ে এই হামলা চালান। হামলা ও গুলিতে অসংখ্য বিক্ষোভকারী আহত হন। পুলিশ হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার কোনো চেষ্টাই করেনি। পরদিন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকেরা একই ধরনের হামলা চালান এবং ওই এলাকায় তারা ভবন থেকে গুলি করেন।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!