গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ওই ভূখন্ডের দখল নিতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এ ধরনের প্রস্তাব সামনে এনেছেন। এর জবাবে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে আরব দেশগুলো বিকল্প প্রস্তাব আনতে জরুরি চেষ্টা চালাচ্ছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। খবর রয়টার্স, আরাব নিউজের। ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ মাসেই সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে যাচ্ছে সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান,সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব দেশগুলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে যে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও যোগ দেবেন।
এ বৈঠকে ফিলিস্তিন নিয়ে খসড়া নানা প্রস্তাব আলোচনা হতে পারে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃত্বে ফিলিস্তিন পুনর্গঠন তহবিল গঠন। এ ছাড়া হামাসকে পাশ কাটিয়ে একটু চুক্তি সম্পাদন করা। পাঁচটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘নির্মূল’ করে জর্ডান ও মিসরে পুনর্বাসনের ট্রাম্পের পরিকল্পনায় আরব বিশ্বের দেশগুলো বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। ট্রাম্পের এ প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করেছে কায়রো ও আম্মান। তারা বলেছে, এ ধরনের পরিকল্পনা করা হলে তা এ অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।সূত্র জানায়, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সৌদি আরব বেশি হতাশ। কারণ, এই পরিকল্পনায় ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের জন্য তাদের দাবি টিকবে না।
রয়টার্স সৌদি আরব, মিসর, জর্ডানসহ আরব বিশ্বের ১৫টি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনার বদলে বিকল্প প্রস্তাব আনার জন্য দ্রæত কাজ করার কথা বলেছে। এর মধ্যে সৌদি আরব সরকারের সূত্র বলেছে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতোমধ্যে কমপক্ষে চারটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে এ মুহূর্তে মিসরের একটি খসড়া প্রস্তাব আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
মিসরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একটি জাতীয় ফিলিস্তিনি কমিটি গঠন করে গাজার শাসন করা হবে,যাতে হামাসের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। ফিলিস্তিনিদের বিদেশে পুনর্বাসনের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে গাজায় পুনর্গঠন কাজ চালানো হবে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে এগোনো হবে।
মিসরের তিনজন নিরাপত্তা সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছে। সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে রিয়াদে এ নিয়ে আলোচনায় বসবেন। ২৭ ফেব্রæয়ারি এ পরিকল্পনা আরব সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।
এ ক্ষেত্রে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কী ভূমিকা রাখবেন, সেটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। জর্ডানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বলেছি,আমরা একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। আমাদের সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনের সঙ্গেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে যুবরাজ ব্যবসা এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার রাজনীতির মাধ্যমে সৌদি আরবের সম্পর্ক সম্প্রসারণ করছেন। সৌদি আরবের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে এ মাসে একটি সম্মেলন হতে যাচ্ছে, যেখানে ট্রাম্পের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি সাক্ষাতের আয়োজন করছে রিয়াদ।
আরব দেশগুলোর পরিকল্পনা নিয়ে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘এই মুহূর্তে একমাত্র পরিকল্পনা, যদিও তারা এটি পছন্দ করে না, কিন্তু একমাত্র পরিকল্পনা হলো ট্রাম্পের পরিকল্পনা। তবে তাদের যদি আরও ভালো পরিকল্পনা থাকে, এখনই উপস্থাপন করার সময়।’
আপনার মতামত লিখুন :