বুধবার, ২১ মে, ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচি

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জারিকৃত অধ্যাদেশ বাতিল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। বুধবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা জানেন গত ১২ মে শতবর্ষ প্রাচীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের উদ্দেশ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে অত্যন্ত গোপনে এবং প্রত্যাশিত সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে অজ্ঞাত রেখে।
তারা বলেন, জারিকৃত অধ্যাদেশ বাতিলসহ তিনটি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিগত ১৪ মে থেকে আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে আসছি। প্রতিবাদ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আমরা তিনদফা দাবি পেশ করি। এ দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে আমরা গত ১৪-১৫, ১৭-১৯ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে আংশিক কলম বিরতি পালন করা হয়। পরবর্তীতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সভা অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে কোন কর্মসূচি রাখা হয়নি।
মঙ্গলবার (২০ মে) অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দুইজন উপদেষ্টা যথাক্রমে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যবৃন্দ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তিনজন প্রাক্তন সদস্য, অর্থ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান।
সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় যে, এনবিআরের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সংস্কারের পক্ষে এবং তারা চান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা হোক। পরিষদের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলা হয়, এনবিআরকে অক্ষুন্ন রেখে তাকে আরও শক্তিশালী, আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই হবে দেশের জন্য কল্যাণকর।
এছাড়া, পরিষদ এটিও উল্লেখ করে যে, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংক ট্যাংক যেমন সিপিডি, টিআইবি প্রমুখ ইতোমধ্যে প্রকাশ্য বিবৃতিতে সংস্কার প্রক্রিয়ার কাঠামো ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সভায় রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যগণ স্পষ্টভাবে বলেন যে, তাদের অন্তর্র্বতীকালীন প্রতিবেদনে যেভাবে সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, তা জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি। কমিটির সদস্যরা বলেন, যদি তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। তারা দুটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্ধারিত হওয়া উচিত এই বিষয়ে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেন।
পরামর্শক কমিটির বক্তব্যের শেষে দুইজন উপদেষ্টা বক্তব্য রাখেন। আমরা আশা করেছিলাম যে, পরামর্শক কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা দুইজন উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে পাবো। কিন্তু পরিতাপের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে, তারা জারিকৃত অধ্যাদেশের পক্ষে কথা বলেন এবং অধ্যাদেশটি ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কোনটি সঠিক, কোনটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য, কোনটি দেশের জন্য সর্বোত্তম হবে সে বিষয়ে তারা কিছু বলেননি।
সবশেষে সভায় অর্থ উপদেষ্টা জানান যে,বাস্তবায়ন পর্যায়ে আমাদের কনসার্ন অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করবেন। মিটিং শেষে অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় একটা বিবৃতি মিডিয়ার কাছে দিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দশের স্বার্থে যে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে তা থাকবে, তবে আমাদের যে জিনিসগুলে আছে তা উপদেষ্টা কমিটির সাথে আলোচনা করে বিধি বা অন্য কিছু করে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা নয় তিনি জানিয়েছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে কী চলবেনা সে বিষয়ে কিছু আসে যায়না মর্মে তিনি পরিষদকে মন্তব্য করেছেন। জুলাই বিপ্লব ফ্যাসিবাদ উত্তর যুগে মিটিং এ সরকারের নীতিনির্ধারকরা বক্তব্য ও সভা শেষে মিডিয়ায় প্রদত্ত বক্তব্য আমাদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস্, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগের সকল স্তরের কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের সমন্বয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের একটি এডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) উক্ত এডহক কমিটির গ্রেড-১০ ও তদূর্ধ্ব অংশের সদস্যগণের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। অতঃপর ধারাবাহিকভাবে গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০ অংশের সদস্যগণের প্রাথমিক তালিকাও প্রকাশ করা হবে।
একটি বিষয় শুরু থেকেই আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, আমাদের এই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির ব্যাপকতা ও যৌক্তিকতার বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঠিক তথ্য প্রদান না করে বরং প্রকৃত তথ্য আড়াল করেছেন, যা পরিস্থিতিকে আজকের অবস্থানে উপনীত করেছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলো হলো:-
১. জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে।
৩. রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
৪. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
১. ২১ মে থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে।
২. বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
৩. একই দিনে এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে।
৪. আগামী ২৪-২৫ মে কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগেরসব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
৫. আগামী ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!