পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ বুধবার ঢাকা সফরে আসছেন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং আমনা বালুচ পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেবেন। দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সম্পর্কের নানা বিষয় আলোচনার সময় ঐতিহাসিক অনিষ্পন্ন বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে। মূলত পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি মাসের শেষে ঢাকা সফর করার কথা। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করতেই দেশটির সচিব ঢাকা সফরে আসছেন।
জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ (এফওসি) বৈঠক করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ তার দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে আগামীকাল (বুধবার) ঢাকায় আসছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নির্ধারণ করা না হলেও আলোচনার সময় পারস্পরিক স্বার্থের সব বিষয়ই আলোচনায় আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন,এত দীর্ঘ বিরতির পর, আগে থেকে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন, তবে ব্যাপক ভিত্তিক আলোচনা হবে।
পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হুসেন খান এ বৈঠকে যোগদানের জন্য বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি বাসসকে বলেন, ইসলামাবাদ ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে আগ্রহী।তিনি বলেন, পাকিস্তান বিশেষ করে তাদের পণ্যের দাম প্রতিযোগিতামূলক বিবেচনায় বাংলাদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে। তুলাকে প্রধান পণ্য হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তান তুলা সরবরাহ করতে আগ্রহী।
হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তান যেহেতু আফগানিস্তান ও ইরান থেকে পণ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। তাই পরিবহণ খরচ কম হলে বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানের মাধ্যমে আমদানি অন্বেষণ করার সুযোগ রয়েছে।
সরাসরি বিমান যোগাযোগের বিষয়ে হাইকমিশনার খান বলেন, ফ্লাই জিন্নাহ ছাড়াও, শিয়ালকোটে অবস্থিত আরেকটি পাকিস্তানি বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার সিয়াল ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের কাছে আবেদন করেছে।তিনি বলেন, ফ্লাই জিন্নাহ বর্তমানে ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করার জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, এয়ার সিয়াল অনুমোদন পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, সরাসরি বিমান সংযোগ পর্যটন বৃদ্ধি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ঐতিহাসিক সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, সারা বিশ্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিষয় বিদ্যমান থাকে, তবে বর্তমান সম্পর্ক বা অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্থ করা উচিত নয়।ঢাকায় অবস্থানকালে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বালুচ বৃহস্পতিবার এফওসির পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এ মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন। ২০১২ সালের পর বাংলাদেশে এটি হবে কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ সফরের তারিখ চূড়ান্ত করছি। তবে সফরটি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে শেষ এফওসি ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :